রাহেবুল ইসলাম টিটুল লালমনিরহাট।
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় দহগ্রাম সীমান্তে শূন্যরেখায় কাঁটাতারের বেড়ায় দেড় কিলোমিটার জায়গা জুড়ে কাঁটাতারের বেড়ায় ভারতীয় বিএসএফ কর্তৃক মদের বোতল ঝুলিয়ে রাখার ঘটনায় এলাকা জুড়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের যেসব স্থানে উত্তেজনা দেখা গেছে তার অন্যতম লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম। সন্ধ্যার পর থেকে উচ্চ মন লাইট ব্যবহার করে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছে।
সীমান্তের পাশে বাঁশ ঝাড়ের নিচে তাবু টাঙিয়ে প্রহরায় রয়েছেন,এতে সীমান্ত বাসী আতঙ্কিত রয়েছে। ৫ই অগাস্ট পরবর্তী পরিস্থিতিতে সীমান্ত এলাকার অন্যান্য জায়গার চেয়ে ভৌগলিক কারণে দহগ্রামের বাংলাদেশি নাগরিকদের দুশ্চিন্তা অনেক বেশি কারণ পুরো ইউনিয়নটি ভারতের ভেতরে অবস্থিত। ২২ বর্গকিলোমিটারের এই ভূখণ্ডে প্রায় বিষ হাজার বাংলাদেশি মানুষের বসবাস। ভারতে অভ্যন্তরে তিন বিঘা করিডোর ব্যবহার করে বাংলাদেশের দহগ্রাম ইউনিয়নে প্রবেশ করতে হয়।
রংপুর ৫১ বিজিবির সহকারী পরিচালক (এডি) ওমর খসরু বলেন, আমরা কঠোর অবস্থানে আছি, এখানে আমাদের জনবল বৃদ্ধি করা হয়েছে। কাঁচের বোতল প্রসঙ্গে তিনি বলেন এটি আমরা খতিয়ে দেখছি।
বৃহস্পতিবার সরেজমিন দহগ্রামে গিয়ে বাংলাদেশের খবর জানার চেষ্টা করেছে যে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ সেখানে কী ধরনের তৎপরতা চালাচ্ছে,স্থানীয়দের অসভ্য ভাষায় গালিগালাজ ও করার অভিযোগ শোনা যাচ্ছে স্থানীয় কৃষকদের কাছে। আর সীমান্ত এলাকার মানুষের মধ্যে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা ঠিক কী কারণে।
দহগ্রামে গিয়ে দেখা যায় সীমান্তের শূন্যরেখার পিলারের কাছ দিয়ে চারফুট উচ্চতায় লোহার অ্যাঙ্গেল বসিয়ে কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে বিএসএফ। বুধবার এই বেড়ায় কাঁটাতারের সঙ্গে নির্দিষ্ট দূরত্বে মদের কাচের বোতল বেঁধে দেয়া হয়েছে। সীমানা বেড়ার পাশ দিয়ে বিএসএসফ সদস্যদের সশস্ত্র অবস্থায় ভারী অস্ত্র নিয়ে টহল দিতে দেখা গেছে। ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কামাল হোসেন বলেন, এরকম বেড়া নতুন করে দেয়া শুরু করেছে ভারতের বিএসএফ।
“আগে তো এরকম বেড়া দেয়নি। কিছু কিছু জায়গায় যেখানে বেশি একটু সমস্যা হয় সেখানে দিছে। কিন্তু ইদানিং ওরা কোনো জায়গা বাদ দিতেছে না।
স্থানীয় বাসিন্দা যেটা বলছেন যে এই সীমান্ত পাড় থেকে সাত কিলোমিটার দূরে বিজিবির ক্যাম্প রয়েছে , ফলে বিজিবির সদস্যরা এখানে আসতে বেশ খানিক টা সময় লাগছে। অন্যদিকে বিএসএফ সদস্যরা তারা কড়া পাহাড়ায় ২৪ ঘন্টা সর্বক্ষণিক ভারী অস্ত্র নিয়ে টহল দিচ্ছেন কৃষকদের মাঝে ভীতি তৈরি করছেন, নতুন করে বেড়া দেয়ার পর গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে অনেকের মধ্যেই আতঙ্ক এবং উৎকণ্ঠা দেখা গেছে। দহগ্রামের সরকার পাড়া গ্রামের এক কিলোমিটারের বেশি এলাকায় সীমানা বেড়া স্থাপন করা হয়েছে। সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত জাহাঙ্গীর আলম নামে একজন বলেন, ৫ই অগাস্টে সরকার পতনের পর থেকে পরিস্থিতি নানা কারণে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা তৈরি করেছে। তার বাড়ির সামনেই তারকাঁটার বেড়া দেয়া হয়েছে। বুধবার তারকাঁটায় মদের কাচের বোতল ঝুলিয়ে দিয়েছে ভারতীয় বিএসএফ।
বাংলাদেশে সরকার পতনের পর ভারত বাংলাদেশ সম্পর্কে যে পরিবর্তন হয়েছে তার প্রভাব পড়েছে সীমান্তবর্তী দহগ্রামে মানুষের জীবনযাত্রায়। অন্যদিকে ফজলুল হক নামে অপর ব্যক্তি বলেন শান্তিভাবে তিনবিঘা করিডোর দিয়া হাটবাজার করতে পারতিছি না। এই বেড়াকাঁটা দেয়ার আগে মহিলা মানুষ ভাত নিয়ে যাইতেছে মাঠে, আমরা কাজ করতেছি ওরা (বিএসএফ) দিতেছে পিটেন।”
দহগ্রাম থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ বাহিরের জন্য একমাত্র পথ হলো তিনবিঘা করিডোর। তিনবিঘা করিডোর চব্বিশ ঘণ্টা খোলা থাকলেও ৫ই অগাস্টের আগের তুলনায় কিছুটা কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী সীমান্তে শূন্যরেখার দেড়শ গজের মধ্যে বেড়া দেয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু ২০১০ সালে ভারত বাংলাদেশ চুক্তি অনুযায়ী দহগ্রামে শূন্যরেখা বরাবর বেড়া দেয়ার অনুমোদন পায় ভারত। এতদিন সেই বেড়া না দিলেও ৫ই অগাস্টের পর এই বেড়া দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে ভারত।
সীমান্ত পরিস্থিতির এই উত্তেজনার মাঝে তিনবিঘা করিডোর এলাকায় গত মঙ্গলবার বিজিবি বিএসএফ এর মধ্যে পতাকা বৈঠক ও সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়েছে। তবে সেখানে উপস্থিত কর্মকর্তারা সংবাদকর্মীদের সাথে সীমান্ত এলাকার মানুষের উদ্বেগ নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি তারা।
এদিকে ভারতের বিএসএফের দাবি শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সম্পাদিত দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আলোকে তারা সীমান্তে বেড়া নির্মাণ করছে। নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির বিরাজ করছে।
বিজিবি জানায়, শুক্রবার দহগ্রাম আঙ্গরপোতা এলাকায় শূন্য লাইন বরাবর বিজিবির বাধার মুখে উভয়পক্ষে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ফলে বিজিবি রংপুর সেক্টর কমান্ডার ও বিএসএফের জলপাইগুড়ি সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ে একটি স্পট মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। ওই মিটিংয়ে রংপুর-৫১ বিজিবির অধিনায়ক এবং বিএসএফ-৬ ও বিএসএফ-৪০ এর অধিনায়কসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকসূত্রে জানা গেছে বিএসএফ জানিয়েছে, তিনবিঘা করিডোর এলাকায় ফ্লাইওভার নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত দহগ্রাম আঙ্গরপোতা এলাকার সাধারণ মানুষকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে তিনবিঘা করিডোর দিয়ে যাতায়াতের জন্য ২০১০ সালে ভারত সরকার ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ওই চুক্তি মোতাবেক বিএসএফ ভারতীয় লোকজনের সহায়তায় দহগ্রাম এলাকায় শূন্য লাইন বরাবর চার ফুট উচ্চতার এক সারিবিশিষ্ট কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করবে। ফলে বিএসএফ শ্রমিকদের নিয়ে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের কাজ শুরু করে।
সূত্র আরও জানায়, সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ের ওই বৈঠকে উভয়পক্ষের মধ্যে সিদ্ধান্ত হয় যে পরবর্তী সময়ে উভয় দেশের ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক পর্যায়ে সরেজমিনে যৌথ সমন্বয়ের মাধ্যমে পরবর্তী কর্মপন্থা নির্ধারিত না হওয়া পর্যন্ত সকল ধরণের নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকবে।
রংপুর-৫১ বিজিবির সহকারী পরিচালক (এডি) পরিচালক আমীর খসরু বলেন, আমরা কঠোর অবস্থানে আছি, এখানে আমাদের জনবল বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে বিএসএফ এখান থেকে সরে গেছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। বিজিবি টহল বাড়ানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৭ জানুয়ারি রাতে উপজেলার ধবলসুতি সীমান্তে ল্যাম্পপোস্ট স্থাপনের চেষ্টা করে বিএসএফ। পরে বিজিবির বাধার মুখে সেটি সরিয়ে নেওয়া হয়। তারও আগে গত ১ জানুয়ারি পাটগ্রামের দহগ্রাম ইউনিয়নের সরকারপাড়া সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া ও ল্যাম্পপোস্ট স্থাপনের চেষ্টা করলে বিজিবির প্রতিবাদ ও বাধার মুখে সেখান থেকেও ফেরত যায় বিএসএফ।