অনলাইন রিপোটঃ
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জের তিস্তার দুর্গম চরাঞ্চল চরবৈরাতির দরিদ্র ঘরের কন্যা সূর্যমণি। বাবা দিনমজুর আবদুস সাত্তার। ৪র্থশ্রেণী পর্যন্তই তার লেখাপড়া পরিবারের অভাব অনটনে কাজের সন্ধানে মেঝো বোনের হাত ধরে ছুটে যায় ঢাকায়।
যখন সূর্যমণির বয়স ১১ বছর তখনই প্রথমে কাজ নেয় বাসায় ঝিয়ের। সেই বালু কন্যা সূর্যমণি। পরে গার্মেন্টকর্মী। বায়িং হাউজের কলগার্ল। সেই গার্মেন্টকর্মী থেকে এখন আন্তর্জাতিক লেডি মাফিয়া। মাফিয়া ডন। বর্তমান হেরোইন, কোকেনের বিশাল চালানসহ আটক হয়ে শ্রীলঙ্কা কারাগারে বন্দি।
বাংলাদেশি কন্যা সূর্যমনি শ্রীলঙ্কায় আটকের পর দেশ জুড়ে আলোচনা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, লালমনিরহাট জেলা শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে কালীগঞ্জ উপজেলা। যেখান থেকে আরো ৫ কিলোমিটার দুরে তিস্তা নদীর কোল ঘেঁষা নিভৃত পল্লী চারিদিকে বালুময় চরবৈরাতী হাজিরহাট গ্রাম।
ওই গ্রামে সূর্যমনির বাড়ি। বাড়িতে রয়েছে ২টি টিনের কাঁচা ঘর। ঘরে নেই সেই আসবাবপত্র। তবুও ৫ বছর আগের চেয়ে চাকচিক্য বেড়েছে। সূর্যমনির বাবা আবদুস সাত্তার ৩ বছর আগেও নদী থেকে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। অভাব অনটনের কারণে ১১ বছর বয়সে সূর্যমনি গার্মেন্টে কাজ করার জন্য ঢাকা পাড়ি দেয়।
তুষভান্ডার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের জন্মনিবন্ধন সনদ মতে সূর্যমনির জন্ম ২০০০ সালে ১৪ই নভেম্বর। সেই সময় জন্মনিবন্ধন মতে তার বয়স ১১ বছর হওয়ায় গার্মেন্টে চাকরি পায়নি সূর্যমনি। তখন ঢাকার এক গার্মেন্ট মালিকের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ নেয়। পরে তার ভাই রাশেদুল ইসলাম চাকরি পায় যাত্রাবাড়ী ইয়ার গার্মেন্টে।
ওই গার্মেন্টের মালিকের সহায়তায় সূর্যমনির নকল জন্মসনদ তৈরি করে বয়স বাড়ালে চাকরি হয়। ভাই-বোন একসঙ্গে চাকরি করে যাত্রাবাড়ী ইয়ার গার্মেন্টে। ওই গার্মেন্টের সূত্র ধরে উত্তরা ৯নং সেক্টরের আবদুল্লাপুর এলাকায় বায়িং হাউজে কাজ নেয়। সেই বায়িং হাউজের মালিক চয়েজের সঙ্গে ছিল সূর্যমনির সখ্য। মালিকের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকায় কথা মতো কাজ করত সূর্যমনি। নিভৃত পল্লী চরবৈরাতী এলাকাবাসী জানান, প্রথমে ঝিয়ের কাজ, পরে গার্মেন্টে চাকরি করার সময় সূর্যমনি তার বাড়িতে সংসার খরচের জন্য দিতো ৫ হাজার টাকা প্রতি মাসে।
সেই সূর্যমনি বায়িং হাউজে চাকরির পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়িতে পাঠাতে শুরু করে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা প্রতি মাসে। পরে ওই টাকা দিয়ে তার কৃষক বাবা আবদুস সাত্তার জমি ক্রয় ও বন্ধক নেয়া শুরু করে। এলাকাবাসী তাক লাগে একজন গার্মেন্টকর্মী কিভাবে এত টাকার মালিক হয়। সূর্যমনি ঈদে বা বিভিন্ন সময় বাড়িতে আসতো। কিন্তু আসতো ঢাকা থেকে সৈয়দপুর প্লেনে। সৈয়দপুর থেকে বাড়ি আসতো বিলাসবহুল গাড়ি চড়ে।