সাংবাদিকতা জীবনে তিনি সাপ্তাহিক রণাঙ্গন, দৈনিক জনতা, দৈনিক দিনকাল ও দৈনিক নয়া দিগন্তে কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি দৈনিক মানব জমিনের কালীগঞ্জ প্রতিনিধি। এছাড়াও স্থানীয় লালমনিরহাট বার্তা ও রংপুর থেকে প্রকাশিত দৈনিক দাবানল পত্রিকায় বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন।
কোনো সংবাদ পাওয়ার পর সংবাদটি অফিসে না পাঠানো পর্যন্ত তিনি কখনও খেতেন না। অবাক করা বিষয় হলো, ১৯৭১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তার প্রকাশিত সংবাদগুলো তিনি এখনও সংগ্রহে রেখেছেন। একই সঙ্গে নিজেকে দক্ষ করে তুলেছেন প্রযুক্তিতেও। অনেকে এখনও প্রযুক্তির সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পারলেও ৬২ বছর বয়সী শেখ আবদুল আলিম সংবাদ লেখার ক্ষেত্রে ব্যবহার করেন ল্যাপটপ, ছবি তোলার ক্ষেত্রে ক্যামেরা ও মডেম দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন।
শেখ আবদুল আলিম সাংবাদিকতার পাশাপাশি একাধিক সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। সেই সঙ্গে তিনি অসংখ্য কবিতা, ছোট গল্প, প্রবন্ধ, সম্পাদকীয় ও নাটক লিখেছেন। তার লেখা প্রকাশিত হয়েছে অসংখ্য পত্রিকায়
শেখ আবদুল আলিমের কাছে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হলো, ৪৫ বছরের সাংবাদিকতা জীবনে তার কোনো সংবাদে আজ পর্যন্ত প্রতিবাদ প্রকাশিত হয়নি। সম্প্রতি লালমনিরহাট অনলাইন নিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় উঠে এসেছে তার ৪৫ বছরের সাংবাদিকতা জীবনের নানান ঘটনা।
২০০০ সালের ঘটনা। ওই সময় বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার ও ফাঁসি কার্যকর না হওয়ায় তিনি আত্মহত্যা করবেন বলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফ্যাক্স বার্তার মাধ্যমে একটি বার্তা পাঠান। ঘটনাটি বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশের পর হৈচৈ পড়ে যায়। এ ঘটনার পর পুলিশ তাকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর বর্তমান সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরজ্জামান আহম্মেদসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা কালীগঞ্জ থানা থেকে তাকে মুচলেকা দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।
পরে আলিম পণ করেন—বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার বিচারের রায় কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত তিনি আমিষ (মাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদি) খাবেন না। যেসব খাবার তৈরিতে ডিম ব্যবহৃত হয় সেগুলোও খাওয়া ছেড়ে দেন। আমিষ খাওয়া ছাড়ায় তিনি নানা শারীরিক সমস্যায় পড়েন, কিন্তু ‘ওয়াদা’ থেকে পিছপা হননি। ঈদে বাড়িতে কোরবানি পর্যন্ত দেননি। বাবা আমিষ খান না বলে তাঁর মেয়েও আমিষ খাওয়া ছাড়েন। প্রায় এক দশক পর ২০১০ সালের জানুয়ারিতে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের রায় কার্যকর হওয়ার পর এলাকার লোকজন আনুষ্ঠানিকভাবে আবদুল আলিমকে আমিষে ফিরিয়ে আনে।
শেখ আবদুল আলিম বোতলা গ্রামের মৃত শেখ আব্বাস আলী ছেলে। ১৯৭২ সালে তিনি এসএসসি পাস করেন। স্ত্রী মাহমুদা বেগম ৪ সন্তানের জননী। বড় ছেলে মাহাবুবুল আলম কাঞ্চন ও দ্বিতীয় ছেলে শেখ মজিবুল আলম মানিক। প্রথম মেয়ে কামেরি তানজিন জুঁই বাকপ্রতিবন্ধী ও দ্বিতীয় মেয়ে তাসমেরি তানজিন বেলি। দুই মেয়ের এলাকাতেই বিয়ে হয়েছে। ছেলেরা স্থানীয় চন্দ্রপুর বাজারে ব্যবসা করেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ভারতের দিনহাটায় ফুপুর বাড়িতে দৈনিক দাবানলের বর্তমান সম্পাদক খন্দকার গোলাম মোস্তফা বাটুলের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সেই পরিচয়ের সূত্র ধরে দিনহাটা থেকে প্রকাশিত তৎকালীন সাপ্তাহিক রণাঙ্গন পত্রিকায় যুদ্ধের একটি লেখা প্রকাশ পায়। এরপর থেকেই তিনি সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।
১৯৯৪ সালে কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুর এলাকায় ডায়রিয়ার মহামারি আকার ধারণ করে। দিনে দিনে মৃত্যু সংখ্যা বাড়তে থাকে। তখন সাংবাদিক আবদুল আলিম একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ডায়রিয়া প্রতিরোধে গ্রামে গ্রামে কাজ শুরু করেন। তার কাজের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে তাকে পুরস্কৃত করা হয়।
প্রবীণ সাংবাদিক আবদুল আলিম বলেন, আমার সাংবাদিকতার প্রেরণা জুগিয়েছেন দৈনিক দাবানল পত্রিকার সম্পাদক খন্দকার গোলাম মোস্তফা বাটুল ভাই। তার দেখানো পথে সাংবাদিকতা জীবনে সব সময় চেষ্টা করেছি পাঠককে নির্ভুল তথ্য দিতে।
ছেলে শেখ মুজিবুল আলম মানিক জানান, তার বাবা সাংবাদিক, এই পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। আমার বাবা অনেক কষ্টে আমাদের বড় করেছেন।
কালীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক তিতাস আলম বলেন, প্রবীণ সাংবাদিক আবদুল আলিম সাংবাদিকতা করতে গিয়ে অনেক কষ্ট করেছেন। তিনি সাংবাদিকদের অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।