এম,লুৎফর রহমান,নরসিংদী প্রতিনিধি ঃ নরসিংদীতে সরকারী নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে লোকালয়ে গড়ে উঠা ইটভাটাগুলো ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে নিজেদের ইচ্ছেমত। এতে করে পরিবেশ ভারসাম্য হারিয়ে নানাবিধ সমস্যায় পড়ছেন লোকালয়ে বসবাসকারী পরিবারগুলো। রহস্যজনক কারনে নিরব ভুমিকা পালনের অভিযোগ স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, লোকালয় থেকে কমপক্ষে এক কিলোমিটার দুরত্ব ও ফসলি জমি ছাড়া ইটভাটা স্থাপনের আইন থাকলেও নরসিংদীর বেলাব গাংকুল পাড়ায় লোকালয় ঘেষেই ফসলি জমিতে গড়ে তুলেছেন ফেভারিট ব্রিকস্ লিমিটেড নামে একটি ইটভাটা।
ইটভাটার জন্য মাটি কেটে ফসলি জমি ধ্বংসসহ নানাবিধ সমস্যায় গ্রামবাসী। ইটভাটা মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় রহস্যজনক কারনে নিরব ভুমিকা পালন করছেন স্থানীয় প্রশাসন। ইটভাটার কালো ধোয়ায় সকল গাছপালা মরে যাচ্ছে, নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বাড়ীঘর। এতে করে নানা রকম অসুখ-বিসুখে ভোগচ্ছেন এলাকাবাসি। ইটভাটায় ব্যবহৃত কয়লার সাথে এলাকায় জোঁকের উপদ্রব ও বেড়ে গেছে। কেউ কিছু বলতে সাহস পায়না। গাংকুল পাড়া গ্রামের বাসিন্দা মোসলেহ উদ্দিন জানায়, ইটভাটার মালিক আমানুল্লাহ আমান অত্যন্ত চালাকচতুর ও সুবিধাবাদী লোক। যখন যে দল ক্ষমতায় আসে সে দলেই যোগদান করে এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। আগে বিএনপি করতো, এখন শুনেছি আওয়ামীলীগে যোগ দিছে। শিল্প মন্ত্রীর ছবি দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর পোষ্টার ছাপিয়ে এলাকা ছেয়ে ফেলেছে। একই গ্রামের কৃষক মনিরুজ্জামান জানান, ইটভাটার কারনে আমাদের ফসলি জমি নষ্ট হয়ে গেছে। এখানে এখন কোন ফসল হয়না, এ ব্যপারে বিভিন্ন জায়গায় লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ দিয়ে কোন কাজ হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে আমরা আমাদের ফসলি জমির মাটি বিক্রি করে দিচ্ছি। রাশিদা আক্তার নামে এক গৃহবধু জানান, আমাদের বাড়ীর সামনেই এই ইটখোলা হওয়ার কারনে আমাদের বাড়ীর মেয়ে ছেলেরা বাইরে বেরুতে পারেনা। বাড়ীর বাইরে বেরুলেই ইটখোলার পোলাপাইন নানাভাবে অত্যাচার করে। কেউ কিছু বললেই মালিকের লোকজন আমাদের উপড় হামলা চালায়। আব্দুল্লাহ আল মামুন নামে একজন বলেন, আমাদের এলাকায় একসময় প্রচুর কাঠাল,লিচুসহ বিভিন্ন ফল হতো। সেগুলো আমরা নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাজারেও বিক্রি করতাম। কিন্তু ইটভাটার কারনে এখন আর সেসব গাছে ফলন হয়না। কুঁড়ি থেকে ঝরে পড়ে যায় এবং নষ্ট হয়ে যায়। ইটভাটার কয়লার সাথে প্রচুর জোঁকের আমদানী হয়েছে। জোঁকের উপদ্রবে বাড়ীর গৃহপালিত গরু-ছাগল মাঠে নিতে পারিনা। আবার ঘাস কাটতে নিজেরাও মাঠে যেতে পারিনা। ইটভাটার মালিক প্রভাবশালী। বিভিন্নভাবে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ইটভাটা চালিয়ে আমাদের ক্ষতি করছে। আমরা এর প্রতিকার চাই। বেলাব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাপ মিয়া বলেন, লোকালয়ে ইটভাটার কারনে পরিবেশ ও স্থানীয় লোকজনের কোন সমস্যা হচ্ছেনা। এখানে কোন ফসল হয়না, সবকিছু জেনেশুনেই পরিষদ থেকে অনাপত্তি পত্র ও নিয়মিত ট্রেড লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে। এ ব্যাপারে বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে হাবীবা অভিযোগের বিষয় অস্বীকার করে বলেন, কোন অভিযোগ পাইনি, অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
আর বিষয়টি পরিবেশ অধিদপ্তর বলতে পারবে। কারন তারাইতো ছাড়পত্র দেয়। পরিবেশ অধিদপ্তর নরসিংদী জেলার রিসার্চ অফিসার আকতারুজ্জামান টুকু বলেন, পরিবেশ দূষণকারী ও নিয়মবর্হিবিতভাবে পরিচালিত ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অভিযান চলছে। আমরা নরসিংদী জেলার প্রায় ৯০ ভাগ ইটভাটাকে সরকারী নিয়মনীতি মেনে ব্যবসা চালানোর জন্য বাধ্য করে৬রিবেশ দূষণ রায় সরকার জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন, আমরারও সে লক্ষে কাজ করছি। ফেভারিট ইটভাটা যদি সরকারী নিয়ম বর্হিভূত পরিচালিত হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।