রাহেবুল ইসলাম টিটুল লালমনিরহাট সংবাদদাতাঃ
লালমনিরহাট জেলায় বিভিন্ন কোম্পানির সহায়তায় চাষীরা মাঠে কলমি শাক বীজ উৎপন্ন করছেন। বর্তমানে তিস্তায় সবজি খাওয়ার জন্য চাষ হচ্ছে কলমি শাক। অন্যান্য শাকের সাথে পাল্লা দিয়ে বাজারে বিক্রি হচ্ছে এ কলমি শাক। দামও ভাল। আগে খাল-বিল, পুকুরসহ বিভিন্ন জলাশয়ে অবহেলায় কলমি শাক উৎপন্ন হতো। কিন্তু বর্তমানে বাজারজাত করার জন্য আবাদি জমিতে কলমির চাষ করছে চাষীরা। জেলার সব বাজারে পাওয়া যাচ্ছে কলমি শাক। স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ এর পুষ্টিগুণ জেনে বর্তমানে বাজার থেকে কলমি শাক কিনে বাড়িতে নিয়ে রান্না করে খাচ্ছেন।
লালমনিরহাট উপজেলার কালীগঞ্জ উপজেলার
দক্ষিণপাড়ার পাড়া গ্রামের পারুল বেগন ও তার স্বামী হজরত আলী ১৫ শতক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে কলমি চাষ শুরু করেছেন। তিনি এতে সফলতা পেয়েছেন। তার কলমির ক্ষেতে গিয়ে দেখা গেছে ক্ষেত যেন সবুজের চাদরে ঢাকা। কলমি চাষ সম্পর্কে পারুল বলেন, ‘আমি প্রথমে এলাকার মাঠে কলমি শাকের বীজ উৎপন্ন হতে দেখি।
তাই আমি ভাবলাম লালতীরসহ বিভিন্ন বীজ কোম্পানী কলমি বীজ কেনে। চৈত্রের শেষে আমি ১৫কাঠা জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে কলমি চাষ শুরু করি। বর্তমানে কলমি শাক বাজারে বিক্রি করে আমার ভালোই আয় হচ্ছে।’ পারুলের সফলতা দেখে এলাকার আরো কয়েকজন চাষী তাদের বেশ কিছু জমিতে কলমি চাষ করেছেন। তারাও সফল হয়েছেন কলমি চাষে।
পারুল তার জমিতে ৫ কেজি কলমি বীজ বুনেছেন। যার দাম মাত্র চার’শ টাকা। নিয়মিত তিনি ক্ষেতে সেচ দিচ্ছেন। গাছের গোড়ায় রস থাকলে ক্ষেতে সেচ দিতে হয় না। গত তিন মাসে ওই তিস্তার জমিতে তার মোট খরচ হয়েছে দু হাজার টাকা। এর মধ্যে ৪ বার ক্ষেত থেকে কলমি কেটে বিক্রি করেছেন। খরচ বাদ দিয়ে লাভ এসেছে প্রায় ২৫ হাজার টাকা। প্রতি আঁটি (এক কেজি) কলমি বাজারে পাইকারী বিক্রি করছেন ১০ টাকায়। ব্যবসায়ীরা প্রতি অঁটি বিক্রি করছেন ১৫ টাকায়। পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করে সফলতা পাওয়ায় তিনি আরো বেশি জমিতে কলমি শাকের চাষ করবেন বলে জানান।
এদিকে আমিনগঞ্জ গ্রামের কাশিম, মনিরুল, জামাল, বরকত আলীসহ বেশ কয়েকজন চাষী বিভিন্ন বীজ কোম্পানীর সহযোগিতায় কলমি শাকের চাষ করেন। তারা শাকের জন্য চাষ করেন না। বীজের জন্য চাষ করেন। কলমি বীজ চাষি লাবলু বলেন, ৮/১০ বছর ধরে বিএডিসি, লাল তীর, ব্র্যাক, মেটাল সীড, গ্যাটকো সীডসহ বিভিন্ন কোম্পানির সহযোগিতায় এলাকার বেশ কিছু চাষি কলমি শাক করে বীজ উৎপাদান করছেন। ওই বীজ ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা মণ দরে কোম্পানি কিনে নিয়েছে। বর্তমান বাজারে এ বীজের দাম কিছুটা কমে গেছে।
তিনি বলেন, কলমি বীজ উৎপাদনের জন্য ভাদ্র মাসে ইরি-বোরো ধানের মত ক্ষেত তৈরি করে ৫/৬ ইঞ্চি লম্বা চারা জমিতে রোপন করতে হয়। এর আগে ধানের মত বীজতলা তৈরি করে নিতে হয়। কলমি ক্ষেতে সব সময় পানি থাকতে হয়। ৪ মাসের এ ফসলে ফুল থেকে বীজ তৈরি হলে ক্ষেত থেকে বীজ কেটে রৌদ্রে শুকাতে হয়। পরে বিভিন্ন কোম্পানির কাছে বীজ বিক্রি করা হয়।
লাভলু বলেন, এক একর জমির কলমির বীজ তৈরি করতে চাষ, সেচ, সার ও লেবার খরচ বাবদ প্রায় ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়। ওই জমির উৎপাদিত বীজ গেল বার ৭৫ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। এদিকে কলমী শাকের বীজ উৎপাদনকারী অনেক চাষী বললেন, বীজ তৈরির চেয়ে কলমী শাক চাষে খরচ কম এবং লাভ অনেক বেশি। বিধায় তাদের অনেকে সামনের মৌসুমে বীজ চাষের পরিবর্তে কলমি শাক আবাদ করবেন।