রাহেবুল ইসলাম টিটুল লালমনিরহাট।
অনেক স্বপ্ন নিয়ে ফুলকপি চাষ করে লোকসানের শঙ্কা আর ঋণের বোঝা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন যাচ্ছে লালমনিরহাটের চাষিদের।
কালীগঞ্জ উপজেলার চাষি বাদশা মিয়া চলতি মৌসুমে ফুলকপি চাষ করেছেন এক বিঘা জমিতে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ভ্যানে করে তুষভান্ডার বাজারে নিয়ে আসেন বিক্রির জন্য। বাজারের পরিস্থিতি দেখে মাথায় হাত তাঁর। বাজারে প্রতি ফুলকপির দাম আকারভেদে কোনোটা ৩ টাকা থেকে, কোনোটা ৪ টাকা।
এ অবস্থা দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েন আরেক উপজেলার কাকিনা গ্রামের বাসিন্দা বাবুল মিয়া। তাঁর জমিতে প্রতিটি ফুলকপি গাছের পেছনেই খরচ হয়েছে ৬ থেকে ৮ টাকার মতো। এখন দর যদি নেমে আসে ৪ টাকা তবে এমন অনুভূতিই স্বাভাবিক। আক্ষেপ-ক্ষোভের সুরে বাবুল মিয়া বলেন, ‘কপি বিক্রি করে ভ্যান খরচের টাকাই উঠবে না। এমন বাজার দেখে কলিজা ফেটে যাচ্ছে। মন চাইছে, এখনও জমিতে যে ফুলকপি আছে সেগুলো গরু দিয়ে খাওয়াই।’
লালমনিরহাট সহ বিভিন্ন উপজেলার ক্ষেত থেকে ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে মাত্র দেড় থেকে ২ টাকা দরে। কৃষক বলছে, উৎপাদন খরচের অর্ধেকও উঠছে না। এতে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে জেলার কৃষকদের মাঝে। অনেকেই জমিতেই নষ্ট করে ফেলছেন ফসল। কৃষি অধিদপ্তর বলছে, মৌসুমের মাঝামাঝিতে সরবরাহ বাড়লেও, চাহিদা বাড়েনি। তাই দাম কমে গেছে।
উত্তরবঙ্গের সবজি ভাণ্ডার বলে পরিচিত লালমনিরহাটের ৫ উপজেলা। মৌসুমের শুরুতে জেলার, কালীগঞ্জ, আদিতমারী’ হাতিবান্ধা, পাটগ্রাম
সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন ফুলকপি বোঝাই ১০-১২টি ট্রাক ঢাকায় আসতো। কাওরান বাজারসহ দেশের বিভিন্ন সবজির আড়তে চাহিদাও ছিল ভরপুর। প্রতি পিস বিক্রি হতো ২০-২৫ টাকায়। সেখানে, সপ্তাহখানেক ধরে ফুলকপির দাম নেমেছে দেড় থেকে ৪/৫ টাকায়।
কৃষি অধিদপ্তরের কাছেও এই সমস্যার কোনো সমাধান নেই। এই মৌসুমে কৃষকদের অন্য সবজি আবাদের পরামর্শ দিচ্ছেন কর্মকর্তারা।
লালমনিরহাটের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ড. সাইখুল আরেফিন বলেন, সবজির সিজনের মাঝামাঝি সময়ে সবাই চাষ করে তখন বাজারে সরবরাহ বেড়ে যায়। আর সরবরাহ বেড়ে গেলে কিন্তু চাহিদাও হুট করে বাড়ে না। যার ফলে সবজির দাম কমে যায়। আর মাঝখান দিয়ে ১৫-২০ টাকার ফারাক সেটা ব্যবসায়ীদের হাতে চলে যায়।
উল্লেখ্য, প্রতি পিস ফুলকপি উৎপাদনে কৃষকের খরচ পড়েছে ৬ থেকে ৮ টাকা।