শুক্রবার, ০৫ মার্চ ২০২১, ০৭:৪৪ পূর্বাহ্ন
রাহেবুল ইসলাম টিটুল | লালমনিরহাট |
৬ ডিসেম্বর লালমনিরহাট মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তিযোদ্ধাদের ত্রিমুখী আক্রমণের মুখে লালমনিরহাট থেকে পালিয়েছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। মুক্ত হয় লালমনিরহাট। তবে পালানোর আগে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ ও লুটপাট চালিয়েছিল বর্বর ওই বাহিনী। যার সাক্ষী হয়ে রয়েছে জেলা শহরসহ অন্যান্য উপজেলায় একাধিক গণকবর। এর আগে ৩ মার্চ সকালে পাক হানাদার বাহিনী সড়ক পথে লালমনিরহাট দখল করে।
রেলওয়ে বিভাগীয় শহর লালমনিরহাট ছিল বিহারী অধ্যুষিত এলাকা। ফলে অবাঙালি বিহারীদের সহযোগিতায় হানাদাররা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। যুদ্ধকালীন সময়ে শহরের রেলওয়ে রিক্সা স্ট্যান্ড ও সাহেব পাড়া, সদর উপজেলার বড়বাড়ি আইর খামার, আদিতমারী উপজেলার পূর্ব দৈলজোর ও কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারীতে নিরস্ত্র নিরীহ শত-শত মানুষকে হত্যা করে পুতে রাখা হয়।
একপর্যায়ে ৬ নং সেক্টরের অধীনে কোম্পানি কমান্ডার সিরাজুল হক সিরাজ, শফিকুল ইসলাম মন্টুসহ বিভিন্ন কোম্পানি কমান্ডারদের নেতৃত্বে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা সংঘবদ্ধভাবে ৫ ডিসেম্বর বড়খাতা, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী মুক্তর পর ৫ ডিসেম্বর রাতে লালমনিরহাট শহরে ঢুকে ত্রিমুখী আক্রমণ চালায় ।
এতে কুপোকাত হয়ে ৬ ডিসেম্বর ভোরে রংপুরের উদ্দ্যেশে পালিয়ে যায় হানাদার বাহিনী। যাওয়ার সময় উড়িয়ে দেয় তিস্তা রেল সেতুর দুটি গার্ডার।
লালমনিরহাটে ৭১-এর এই দিনে সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়ে মুক্তির উল্লাস। ৬ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে পাক বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত হয় এ জেলা। মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছিল। ৬ নং সেক্টরের অধীনে ছিল লালমনিরহাট জেলা। এমনটি ৬ নং সেক্টরের কার্যালয় ছিল পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী হাশর উদ্দিন বিদ্যালয়ে অবস্থিত। এ সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন বিমান বাহিনীর এম খাদেমুল বাশার।
লালমনিরহাট শত্রুমুক্ত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে চারিদিক থেকে লোকজন ছুটে আসতে থাকে শহরের দিকে। সন্ধ্যার মধ্যে শহরের প্রাণকেন্দ্র মিশন মোড় এলাকায় লোকজন পূর্ণ হয়ে যায় আর মুক্তির উল্লাস করতে থাকে। শ্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে শহর ও গ্রাম। আনন্দে উদ্বেলিত কণ্ঠে স্বদেশের পতাকা নিয়ে ছুটোছুটি করতে থাকে তরুণ, যুবক, আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সকলেই। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় বের হয় আনন্দ মিছিল। বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের মতো মানুষ জয় বাংলা ধ্বনি দিয়ে ও বিজয়ের পতাকা নিয়ে ঢুকে পড়ে লালমনিরহাট শহরে।
লালমনিরহাট মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় প্রায় দুই হাজার মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। শহীদ হয়েছেন ৩১ জন। এদের মধ্যে লালমনিরহাট সদরে ১০ জন, আদিতমারী ২ জন, কালীগঞ্জ ৭ জন, হাতীবান্ধা ৯ জন, পাটগ্রাম ১ জন, কুমিল্লা জেলার ২ জন। জেলায় গণকবরের (বধ্যভূমি) সংখ্যা ৪০টি । বধ্যভূমিগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে মাত্র। এগুলো সংস্কার ও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন জেলার সকল মুক্তিযোদ্ধা।
লামনিরহাটের একমাত্র বীরপ্রতীক ক্যাপ্টেন (অব.) আজিজুল হক বলেন, এই দিনে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের বের করে সহায় সম্বলহীন মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসন করার জন্য বর্তমান সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
লালমনিরহাট জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম কানু বলেন, সীমিত আকারে এই দিনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা অর্পণ করা হবে।
প্রতিবছর ৬ ডিসেম্বর লালমনিরহাট মুক্ত দিবসকে ঘিরে জেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড আয়োজিত র্যালি, মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হলেও এবার করোনার কারণে কর্মসূচি সীমিত করা হয়েছে।
এবারে তোরণ নির্মাণ, আলোকসজ্জা, ব্যানার ও সন্ধ্যায় ভার্চুয়াল আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছের লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর।
Leave a Reply