রাহেবুল ইসলাম টিটুল লালমনিরহাট…..
করোনাভাইরাস আমাদের অনেক কিছুই শিখিয়ে গেছে। করোনা আমাদের আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে গেছে মানুষ যত ক্ষমতাবানই হোক তাকে সৃষ্টিকর্তার কাছে আত্মসমর্পণ করতে হয়।
করোনা আমাদের আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে বিপদে কীভাবে সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হয়। এই কয়েক মাসে অন্তত মানুষ মারণাস্ত্র দিয়ে একে অন্যকে হত্যার উৎসবে মেতে ওঠেনি। করোনা আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে প্রকৃত অর্থে ছোটবড়, ধনী-গরিব বলতে কিছু নেই, সকল মানুষই সমান।
করোনা আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছে জগতের সব কিছুই মহান সৃষ্টিকর্তার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। করোনাই আমরা আমাদের নিজেদের পরিবার-পরিজন, ছেলেমেয়ে, আত্মীয়-স্বজনকে কাছাকাছি আসার এবং একে অপরকে চেনার সুযোগ করে দিয়েছে। কীভাবে বিপদকে মোকাবিলা করতে হয় তা শিখিয়েছে। এমনকি আপন-পর এবং শত্রু-মিত্রকে চেনারও সুযোগ করে দিয়েছে।
করোনা আমাদের নিজেদের আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে নতুনভাবে জীবন গড়তে সুযোগ করে দিয়েছে। আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছে মানুষ যত শক্তিশালীই হোক তারও একটা সীমা আছে। অর্থবিত্ত, ক্ষমতার লোভে আমরা ভুলেই গিয়েছিলাম আমাদের সীমার কথা। আমরা ভুলেই গিয়েছিলাম সাদা কালো, ধনী-গরিব, হিন্দু-মুসলিম, বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সবকিছুর ঊর্ধ্বে আমরা মানুষ।
করোনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে তা দেখিয়ে দিয়েছে। আমরা যদি করোনার এই বাস্তবতাকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে পারি তাহলে করোনাই হতে পারে আমাদের জন্য আশীর্বাদ। আমরা নিজেদের শুধরে প্রতিষ্ঠিত করতে পারি শান্তিময় একটি বিশ্ব। যেখানে থাকবে না কোনো অস্ত্রের ঝনঝনানি, থাকবে না গরিব-ধনীর বৈষম্য। সেখানে থাকবে না কোনো ধর্মীয় উম্মাদনা।
অদৃশ্য শত্রুর এই থাবা থেকে একদিন মুক্ত হয়ে আলোয় ফিরে আসবে মানুষ। মানবজাতির সেই প্রত্যাশিত দিনের অপেক্ষায় চেয়ে থাকি অবিরাম, নীরবে, নিভৃতে।
অন্যদিকে করোনাভাইরাস মহামারিতে চিত্তাকর্ষক দেশ পরিচালনার জন্য প্রশংসিত হয়েছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা। তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। তিনি ১৭ কোটি জনগণকে অনানুষ্ঠানিক লকডাউনের মাধ্যমে ঘরবন্দি করতে সক্ষম হয়েছেন এবং করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে করে মানুষ সুরক্ষা পাবে।
এছাড়া এই সময় করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে যেভাবে ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা জরুরি পরিষেবায় যুক্ত হয়ে এগিয়ে এসেছেন, স্বার্থহীনভাবে যাঁরা এই সময় কাজ করছেন তাঁদের ধন্যবাদ জানানোর ভাষা নেই। সমাজের প্রতি তাঁদের অবদান, আমাদের সবার কাছে অনুপ্রেরণা।
করোনার এ দুর্যোগকালে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশের পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সেনাসদস্যরা যেভাবে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে যে মহানুভবতা দেখিয়েছে তা ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে। ত্রাণ দিয়েছে, করোনা আক্রান্ত মানুষকে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া বা মারা যাওয়া মানুষকে দাফন কাফনেও এগিয়ে এসেছে। সেনাসদস্যরা নিজেদের রেশন বিলিয়ে দিচ্ছেন, বিভিন্ন জায়গায় মেডিক্যাল ক্যাম্প করেছেন মানুষকে স্বাস্থ্য সহায়তা দিতে।
করোনাকালে আমরা অনেক কিছু হারিয়েছি। দেশ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, বহু মানুষ রোজগার হারিয়েছে। কিন্তু এই সময়ে আমাদের প্রশাসন, পুলিশ ও সেনাসদস্যদের এই মানবিক মুখ বড় অর্জন হিসেবেই বিবেচিত হবে।
সেনাবাহিনীকে বিশেষ প্রয়োজনে ডাকা হয়েছে, তারা আবার চলেও যাবে সেনানিবাসগুলোতে। কিন্তু পুলিশ থাকবে মানুষের মাঝে সাধারণ আইনশৃঙ্খলা ও জনজীবনে শান্তি বজায় রাখার জন্য। করোনায় ডাক্তার, পুলিশ, সাংবাদিকসহ অনেক সদস্য মারা গেছেন, আক্রান্ত অনেকে চিকিৎসাধীন আছেন। এবার পুলিশ মানুষের যে বাহবা কুড়িয়েছে, সেটা তাদের জন্য আগামী দিনের বড় পুঁজি বলেই মনে করছি।
পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সেনাসদস্যদের পাশাপাশি ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী ও সাংবাদিকসহ করোনায় যেসব ফ্রন্টলাইনের যুদ্ধারা রয়েছেন তাদের প্রতি রইলো অবিরাম শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা।
আমরা সবাই একই নৌকায় রয়েছি। এই ঝড় কেটে যাবে। বিপদ যতই বড় হোক না কেন আল্লাহর রহমতের হাত আরও অনেক বড়। চিরদিন অন্ধকার থাকবে না, আবারও আলোর পথে যাত্রা শুরু করবো ইনশাআল্লাহ। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আমীন।
বার্তায় টি ১২ মে তাঁর ফেসবুক টাইম লাইন থেকে নেওয়া তিনি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানান রাকিবুজ্জামান আহমেদ।