৩ আগষ্ট শনিবার সকালে সাঘাটা বাজারস্থ সোনালী ব্যাংকের নীচে থেকে সাঘাটা থানার অফিসার ইনচার্জ মোস্তাফিজার রহমানের সুদৃষ্টিতে বেঁচে গেল এক অসহায় মানব প্রাণ।
জানা গেছে, গত এক সপ্তাহ ধরে অসুস্থ হয়ে একজন মানসিক রোগী সাঘাটা বাজারের সোনালী ব্যাংক এর নীচে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছিলো। আশে পাশে সব সময় শত শত লোক থাকলেও তাকে খাওযানো বা চিকিৎসার জন্য কেহ ছিলোনা। উৎসুক জনতা তার জন্য কোন সহযোগিতা বা সহমর্মিতার হাত বাড়ায়নি।
এমনকি আশে পাশের দোকানীরা দোকান বন্ধ করে রেখেছিলো। অর্ধাহারে-অনাহারেই কাটছে তার কয়েকদিন। খাবার জোটাতে না পারায় শরীরে জোর না থাকায় উঠতে বসতে পারেনি।ওষুধপত্র জোটেনি তার ভাগ্যে। সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পড়ে থাকায় অনেকেই ভেবেছে লোকটি মারা গেছে। তার মৃত্যুর খবর প্রচার হতে থাকে।
শনিবার সকালে সাঘাটা থানার অফিসার ইনচার্জকে কে বা কাহারা খবর দেন যে সাঘাটা বাজারের সোনালী ব্যাঙ্কের নীচে একজন মানসিক রোগীর (পাগল) মরে আছে। সে কথা শুনে ওসি মোস্তাফিজার রহমান তৎতক্ষনাৎ সেকেন্ড অফিসার এসআই সাহাদত হোসেন, এসআই আবুল হাশেমসহ ঘটনাস্থলে পৌছেন।
এসে দেখেন ওই ব্যক্তির শরীরে প্রসাব-পায়খানার দুর্গন্ধের কারনে কেহ তার কাছে যাচ্ছেনা। সকল দুর্গন্ধকে উপেক্ষা করে অফিসার ইনচার্জ প্রাথমিক ভাবে পরীক্ষা করে দেখেন লোকটি মারা যায়নি বেচেঁ আছে।
তিনি ওই সময় জরুরীভাবে ময়লা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কর্মীকে ডেকে এনে প্রথমে ওই স্থানের প্রসাব পায়খানা পরিষ্কার করে নেন। পরে কুড়ানু নামের এক ভ্যানচালককে ডেকে এনে অনেক অনুরোধ করে তাকে গোসলসহ পরিষ্কার করার ব্যবস্থা করেন। পরে ভ্যান যোগে তাকে সাঘাটা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করান। বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
তার দেখভাল ওসি নিজেই করছেন বলে জানা গেছে। অসুস্থ ব্যক্তিটিকে গোসল করিয়ে ভ্যানযোগে যখন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিচ্ছিল তখন উৎসুক জনতা ও সচেতন কিছু মানুষ পুলিশ ও অফিসার ইনচার্জের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তারা বলাবলি করছিলো, আজো পুলিশে ভালো মানুষ আছে।
স্থানীয় অনেকেই জানান মানসিক রোগীটি কয়েক বছর ধরে সাঘাটা বাজারের বিভিন্ন দোকানে ও বাড়ি বাড়ি ঘুরে পেটের খাবার জোটাতো। তার ব্যাপারে অনেকেই বলেন, কেউ তাকে টাকা দিলে সে টাকা নিজে না খেয়ে চকলেট কিনে পথ শিশুসহ যে কোন শিশু দেখলেই তার হাতে গুজে দিতো।
শিশুদের আনন্দ দিতে ওই ব্যক্তি তার খাবারের থালা ঢোল হিসেবে বাজিয়ে গান গাইতো ও নাচতো। শিশুরাও তাই তাকে খুব ভালোবাসতো। ওইব্যক্তি শিশুদের বাড়িতে গেলে তারাও মায়েদের থেকে বেশি করে ভাত বা অন্য খাবার নিয়ে তাকে দিতো।
সাঘাটা থানার অফিসার ইনচার্জ মোস্তাফিজার রহমানের সাথে কথা বললে তিনি জানান, আমি জাত ধর্ম বর্ণ বুঝিনা, আমি বুঝি মানুষবা মানব। আর সেই মানুষের/মানবের সেবার জন্যই আমাকে মাসে সরকার হাজার হাজার টাকা বেতন দেয়। ওই অসুস্থ ব্যক্তিকে পুলিশের দায়িত্ব থেকেই সেবা দেয়ার চেষ্টা করেছি মাত্র।