বড় হওয়ার স্বপ্নের পেছনে ছুটতে গিয়ে অসৎ পথে পা না দিতে তরুণ প্রকৌশলীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) একাদশ সমাবর্তনে ডিগ্রিপ্রাপ্তদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, “কখনো সত্যের সাথে মিথ্যার আপস করবে না। সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলার সৎ সাহস রাখবে। সিমেন্টের বদলে বালি আর রডের বদলে বাঁশ দিয়ে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখবে না।”
২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নির্মাণাধীন একটি ভবনে রডের পরিবর্তে বাঁশের চটা ব্যবহার করায় কাজ বন্ধ করে দেয় স্থানীয় প্রশাসন। গণমাধ্যমে সেই খবর প্রকাশিত হলে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আলোচনার ঝড় ওঠে। পরে দেশের অন্যান্য জায়গা থেকেও রডের বদলে বাঁশ দিয়ে নির্মাণ কাজের খবর আসে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য আবদুল হামিদ নবীন প্রকৌশলীদের উদ্দেশে বলেন, সবসময় বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখতে হবে। সেই স্বপ্ন হবে দেশ, জাতি, সমাজ, পরিবার ও নিজের কল্যাণে।
“সাফল্যের পেছনে না ছুটে কর্মের পেছনে ছুটবে। দেখবে তোমার কর্ম তোমার জন্য সাফল্য আর সুনাম বয়ে আনবে। মনে রাখবে, অন্যায় ও অসৎ পথের যে-কোনো অর্জন ক্ষণস্থায়ী। তাতে সম্মান নেই, আছে ঘৃণা আর জীবনভর অনুশোচনা।
“তাই জীবনে সবকিছু করবে নিজের মেধা, সততা ও আন্তরিকতাকে কাজে লাগিয়ে। চিন্তা চেতনায় সৎ থাকলে আর আত্মবিশ্বাস মজবুত হলে জয় তোমাদের অনিবার্য। তখন সাফল্যই তোমাকে খুঁজে নেবে।”
প্রকৌশল বিষয়ে উচ্চতর লেখপড়া করার জন্য যারা বিদেশে যাবেন, তাদের আবার দেশে ফিরে দেশের কাজে লাগার আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।
তিনি বলেন, “আমাদের দেশ থেকে প্রতিবছর উচ্চশিক্ষার্থে বিপুল সংখ্যক প্রকৌশলী, প্রযুক্তিবিদ, স্থপতি ও পরিকল্পনাবিদ ইউরোপ, আমেরিকাসহ উন্নত দেশগুলোতে যাচ্ছেন। কিন্তু উচ্চশিক্ষা গ্রহণ শেষে অনেকেই দেশে ফেরেন না। ফলে দেশ তাদের মেধা ও সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
“অথচ দেশেই এখন উপযুক্ত কর্মপরিবেশ ও কাজ করার বিশাল ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। তাই আপনাদের সবাইকে দেশ ও জনগণের কল্যাণে অধিকতর অবদান রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।”
সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কথা তুলে ধরে এ বিষয়ে প্রকৌশলীদেরও ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।
তিনি বলেন, “মহাশূন্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করে বাংলাদেশ আজ স্যাটেলাইট ক্লাবের গর্বিত সদস্য। ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হতে চাই। সে লক্ষ্যে সরকার বৃহৎ প্রকল্প পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রামপাল ও মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর, ঢাকা মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পদ্মাসেতু রেলওয়ে লিংক প্রজেক্টসহ মেগা প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়ন করছে।
“এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণে প্রকৌশলীদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বুয়েটের দক্ষ প্রকৌশলীরা এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমার বিশ্বাস।”
বুয়েটের খেলার মাঠে এই সমাবর্তনে পাঁচজন শিক্ষার্থীকে শিক্ষাজীবনে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য স্বর্ণপদক দেন রাষ্ট্রপতি।
অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা ছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অন্যদের মধ্যে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি এবং বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বক্তব্য দেন। সুত্র বিডি নিউজ।