বিনোদন ডেক্স।
চক্ষুদান সিনেমার প্রদর্শনীর পরে চোখের জলে তৈরি ইতিহাস ‘ শিক্ষক-শিক্ষার্থীর ভালোবাসা দিবস’ ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ
শিক্ষক শিক্ষার্থীর সম্পর্ক নিয়ে নির্মিত সিনেমা চক্ষুদান এর ১৬তম প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে রংপুর সদরের আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে। এরপর সেখানে ঘটে যায় এক মহাকাব্য। ঐতিহাসিক ৭ই মার্চকে ‘শিক্ষক শিক্ষার্থীর ভালোবাসা দিবস’ ঘোষণা করা হয় বিদ্যালয়টিতে। যার নেপথ্যে চক্ষুদান সিনেমা শিক্ষা।
গতকাল ৭মার্চ দুপুর সাড়ে বারোটায় ধ্রুবরাজ রণি পরিচালিত চক্ষুদান সিনেমাটি প্রদর্শিত হয় উক্ত বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে। সিনেমাটি সাজানো হয়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক, সামাজিক ও ধর্মীয় শিক্ষা নিয়ে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে একজন শিক্ষক কতটা ভালোবাসে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষক কতটা ত্যাগ করতে পারে তা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সিনেমাটিতে।
এছাড়া ভাই বোনের সম্পর্ক, সন্তানের প্রতি মায়ের মমতা ও আসল নকল বন্ধু বোঝার উপায় ইত্যাদি বিষয়ের উপর পুরো সিনেমাটি নির্মিত হয়েছে। প্রথম থেকে আনন্দের সাথে দেখা শুরু হলেও শেষের দিকে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি কেউ। সিনেমা শেষ হলেও চোখের পানি ঝড়া বন্ধ হচ্ছিলো কারো। স্যার ম্যাডাম আমরা আপনাদের অনেক ভালোবাসি ধ্বনি তুলে চিৎকার করতে থাকে শিক্ষার্থীরা। প্রতিধ্বনিতে উঠে আসে শিক্ষিক-শিক্ষিকার জবাব ‘ আমরাও তোমাদের অনেক ভালোবাসি।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রহমত আলম শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন ‘ আমরা তোমাদের শাষণ করলেও তার পিছনে কতটা ভালোবাসি তা কখনোই বোঝাতে পারিনি। এই সিনেমা তোমাদের তা শিখিয়ে দিয়েছে। তোমাদের চোখের পানিই তা বলে দিচ্ছে।’
বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোছা. সুমাইয়া আক্তার সোমা বলেন’ আগে শিক্ষকরা বকা দিলে ভিতরে ভিতরে রেগে যেতাম। ভাবতাম শুধু শুধু রাগ দেখায়। আজ বুঝতে পাচ্ছি আমাদের শিক্ষকরা আমাদেরকে মানুষ গড়ার জন্যে শাষণ করত। এই শাষণ, শাষণ নয় আমাদের জন্যে নিয়ে দেখা স্বপ্ন।’
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মোছা. রাবেয়া বেগম কান্না বিজড়িত কন্ঠে বলেন ‘ আগে শোনা কথা থেকে বলতাম আমি শিক্ষক হিসেবে সেরা পেশায় আছি। আজ চক্ষুদান সিনেমা একজন শিক্ষকের যে সম্মান দেখালো তাতে করে আমি একজন শিক্ষক হিসেবে বলছি আমি পৃথিবীর সেরা পেশায় আছি।’
এই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী নুহান কবির কান্না বিজড়িত কন্ঠে বলেন ‘ আগে বুঝিনি স্যার আমাদের এতো ভালোবাসে। তাই আড়ালে নানান কথা বলতাম। চক্ষুদান সিনেমা দেখে একটাই কথা বলতে চাই স্যার ম্যাডাম আপনাদের অনেক ভালোবাসি। ‘এই বলে শিক্ষকদের জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চেয়ে কান্না করেন।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আল হারুণ বাপ্পী কাঁদো কাঁদো কন্ঠে মাইক্রোফোন হাতে নেন সিনেমা শেষ হবার আধা ঘন্টা পর। কিন্তু কথা বলতে পাচ্ছিলেন না। কান্নার ঢেউ তার তাকে স্তব্ধ করে দিচ্ছিলো। এভাবেই বললেন ‘ আমি আপ্লুত। আমি শিক্ষক হিসেবে কত সম্মানিত মানুষ সেটিও আজ দেখলাম। আমার ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। কান্না থামাতে পাচ্ছি না। আজ আমি আমার হৃদয় থেকে বলছি আমি আমার সকল শিক্ষার্থীদের আমার সন্তানের মত ভালোবাসি, অনেক ভালোবাসি।
বিদ্যালয়ের আরেকজন শিক্ষক মো.জিকরুল আলম বলেন ‘ আমাদের জীবনে আজ চক্ষুদান যে প্রভাব রাখলো তাতে করে আজ শিক্ষক শিক্ষার্থী একই সুতায় আমরা একই প্রাণ। আজকে আমাদের অঙ্গিকার ২০২৪ সাল হবে আদর্শ স্কুলের শিক্ষার্থীদের আদর্শ বছর।’
শিক্ষার্থীরা জানায় তাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ সিনেমা চক্ষুদান। অনেকেই জানায় তারা বাংলা সিনেমা পছন্দ করত করত। কিন্তু চক্ষুদান সিনেমা দেখার পরে রুচিতে পরিবর্তন এসেছে। তারা এমন সিনেমা আরও দেখতে চায়।
এমন ক্ষনে জনে-জনে যখন আবেগ আপ্লুত। কেউ কেউ মুছছে আঁখিজল। কেউ কাঁদছে শিক্ষকদের জড়িয়ে ধরে। কেউ চাচ্ছে ক্ষমা। থেকে থেকে ধ্বনি প্রতিধ্বনি উঠছে ভালোবাসি ভালোবাসি, তখন আলহারুণ বাপ্পী ঘোষণা করেন ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস আর আমাদের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের ভালোবাসা দিবস এই ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ।
উল্লেখ, শিক্ষক দিবস ২০২৪ উপলক্ষ্যে ডিফেন্স অফ চাইল্ড রাইট ও কালীগঞ্জ করিম উদ্দিন পাবলিক পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত সিনেমা চক্ষুদান। সিনেমাটিতে একজন প্রধান শিক্ষকের ভূমিকায় প্রধান চরিত্রে কাজ করছেন আলহাজ্ব খুরশীদুজ্জামান আহমেদ। এছাড়া শ্রেষ্ঠাংশে অভিনয় করেছেন ধ্রুবরাজ রণি, জান্নাত, টিসা রানী, কেয়া মনি ও শেফালী বেগম। আরও অভিনয় করেছেন কৈলাশ চন্দ্র রায়, শ্যামল চন্দ্র রায়, আনিচুর রহমান সিমন, মো. মিন্টু, আই আই রুবেল, রেজওয়ানা, অন্তরা, লুবনা, জামি, জেমি, আলমগীর হোসেন, সুমাইয়া, রহিমা প্রমূখ।
সিনেমাটির সংলাপ সম্পাদনা করেছেন আব্দুস ছাত্তার, আজাদ আলী ও হায়দার আলী বাবু। কাহিনী, সংলাপ, চিত্রনাট্য, সম্পাদনা ও পরিচালনা করেছেন ধ্রুবরাজ রণি।