রাহেবুল ইসলাম টিটুল লালমনিরহাট ,
লালমনিরহাট সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে জাল দলিল করার চেষ্টার অভিযোগে সেই দলিল লেখক আব্দুস সবুর মন্ডলকে শোকজ করেছে জেলা রেজিস্ট্রার খালিদ মোহাম্মদ বিন আসাদ।
গতকাল মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) বিকালে তাকে শোকজ করা হয়।
এর আগে গত রবিবার (২৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় অর্থের লোভে স্মৃতি নামে এক নারীকে জমিদাতা সাজিয়ে বোরকা পড়িয়ে সাব-রেজিস্ট্রারের সামনে এনে জাল দলিলে সই নেওয়া চেষ্টা করে ওই দলিল লেখক। সাব-রেজিস্টার আহসানুল হাবিব বিষয়টি টের পেয়ে দলিলটি আটকে দেন।
তবে দায়সারা বক্তব্য দিয়ে ঘটনা ধামাচাপার চেষ্টা করার অভিযোগ উঠে ওই সাব রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে এক জমি দাতা জাল দলিল রেজিস্ট্রি করতে আসেন। এসময় দলিল রেজিস্ট্রির সকল কার্যক্রম শেষে টিপসহি দিতে গিয়ে ধরা পড়েন সৃষ্টি নামের এক নারী। এরপর হৈচৈ শুরু হয় অফিস প্রাঙ্গণে। তাৎক্ষণিক ওই নারী এবং তার সাথে থাকা লোকজনকে অফিস কক্ষে নিয়ে যান সাব রেজিস্টার। ঘটনা বেগতিক দেখে ওই দলিলের লেখক আব্দুস সবুর মন্ডল পালিয়ে যায়। পরে সাব রেজিস্টারের কক্ষে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে অভিযুক্ত জাল দলিল লেখকের লোকজন ও জাল দাতার লোকজনের বৈঠক বসে বলে অভিযোগ উঠে সাব-রেজিস্টারের বিরুদ্ধে। এছাড়াও তিনি তাৎক্ষণিক কোনো আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ না করে দ্রুত বিষয়টি সমাধান করে সকলকে চলে যেতে সহায়তা করেন বলেও অভিযোগ উঠে।
এসময় স্থানীয় সাংবাদিকদের সাব-রেজিস্টার আহসানুল হাবিব বলেন, জাল দলিলকারী সেই ব্যক্তি পালিয়ে গেছেন। পুলিশ না থাকায় তাকে আটক করা সম্ভব হয়নি। পরে উদঘাটন হয় ঘটনার রহস্য।
জানা যায়, লালমনিরহাট সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক (লাইসেন্স নং ২৬/৯৩) আব্দুস সবুর অবৈধ সুবিধা নিয়ে গোপনে সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের রাম জীবন মৌজাস্থ অন্যের ভোগ দখলীয় জমির একটি ভুয়া দলিল প্রস্তুত করেন। ওই দলিলে অভিযুক্ত স্মৃতি বেগমের নাম পরিবর্তন করে লেখা হয় শাহিদা বেগম। পরে কৌশলে ওই নারীকে বোরকা পড়িয়ে জমিদাতা সাজিয়ে ভুয়া ওই দলিল সম্পাদনে সাব-রেজিস্ট্রারের সই নেওয়ার সময় আটক হন। এর কয়েক মিনিটের মধ্যেই দলিল লেখকদের সাথে আঁতাত করে আটক ওই নারীকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন সাব-রেজিস্ট্রার।
এদিকে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টায় ক্ষিপ্ত হন দলীল লেখকদের একাংশ। পরে ঘটনাটি নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে নড়েচড়ে বসে জেলা রেজিস্ট্রার। এরপর তিনি ঘটনার তদন্ত শুরু করেন। একপর্যায়ে লোকজ করা হয় অভিযুক্ত দলিল লেখক আব্দুস সবুর মন্ডলকে।
এদিকে ঘটনাধীন সাব রেজিস্ট্রার অফিসের দলিল লেখক সমিতির সভাপতি জাল দলিলের কথা অস্বীকার করে চ্যালেঞ্চ ছুড়ে দিয়ে বলেন, কোন অনিয়ম হয়নি। একপর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে উচ্চ স্বরে কথা বলেন তিনি।
এ ব্যাপারে জেলা রেজিস্ট্রার খালিদ মোহাম্মদ বিন আসাদ বলেন, ঘটনাটি শুনে বিস্তারিত জানার জন্য সাব-রেজিস্টারের কাছে লিখিতভাবে জানতে চেয়েছি। প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত দলিল লেখককে শোকজ করা হয়েছে। সন্তোষজনক জবাব কিংবা অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিধি মতে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। এ ঘটনায় জড়িত অন্যান্যদেরও ছাড় দেওয়া হবে না বলেও তিনি জানান।