রাহেবুল ইসলাম টিটুল লালমনিরহাট।
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জের তিস্তা নদীর পাড়ে জবুথবু হয়ে বসেছিলেন রাহেলা বেগম (৬০)। শরীরে শীত নিবারণের কোনো কাপড় নেই। নদীর পাড়ের ঠান্ডা বাতাসে কাঁপছিলেন তিনি। পরনে ময়লাযুক্ত শাড়ি আর ছেঁড়া পাতলা চাদর।
রাহেলা বেগম বলেন, ‘এই একটাই কাপুড় আছে। রাতে এই কাপুড় পেঁচায়েই শুয়ে থাহি। শীতের আর কাপুড় নাই। ঠান্ডা লাগলে কি আর করুম। সন্ধে রাত্তিরি আগুন জ্বেলে গা (শরীর) গরম করি। আগে শীত আসলে কম্বল পেতাম’ এল্যা তাও পাই না- এবার একটা খেতা (কাঁথা) কম্বলও পাইনি।
এক কাপুড়ে শীত যায় না, কেউ কাপুড় দিতেও আসে না দাদু। আগে শীত এলে কাপুড় পেতাম, এখন তাও পাই না। কাপুড় কেনার সাধ্য নাই। অনেক কষ্ট হয়।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাহেলা বেগম চোখে স্পষ্ট দেখতে পান না। চোখের জন্য প্রতি মাসে হাজার টাকার বেশি ওষুধ কিনতে হয়।
রাহেলার গ্রামের বাড়ি কাশিরাম। জানা গেল, আপনজন বলতে তাঁর এক ছেলে আছে। তবে সে ও ভাল ভাবে খোঁজ রাখে না।
কোন রকম মানবতার জীবনযাপন করছেন তিনি।স্থানীয় একজন ক্ষুদ্র মুদি ব্যবসায়ী জানান, এই এলাকায় এবার তেমন একটা কম্বল বিতরণ হয়নি। তাই কনকনে ঠান্ডায় সমস্যায় পড়েছেন গরিব মানুষ।
কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শুধু রাহেলা বেগমই নয়, হাড়কাঁপানো এই শীতে গরম কাপড় না থাকায় কষ্ট পাচ্ছেন দরিদ্র ও অক্ষম মানুষ। গরম কাপড় কেনার সাধ্য নেই তাঁদের। হাত পেতে দু-একটা কাপড় পাওয়া গেলেও মিলছে না শীত নিবারণের কাপড়।
তিস্তা পারের জলিল মিয়া বলেন, হাত পেতে যা পাই, তা দিয়ে তিনবেলা খাইতেই পাই না। শীতের কাপড়ের দাম বেশি; কেনার পয়সা নাই। ছেঁড়া কাপড়ে শীত যায় না। শীতে পাতলা গেঞ্জি পরে কাঁপছিলেন। জানালেন, এ অঞ্চলে এবার শীত অনেক বেশি। হাঁটতে পারেন না; তাই পয়সাও পান না। খাবার দিলেও কম্বল দেয়নি কেউ।
এবার শীতে কম্বল কম বিতরণের বিষয়টি নজরে এসেছে স্থানীয়দেরও। তাঁরা জানান, এবার শীত বেশি হলেও কম্বল বিতরণ চোখে পড়ছে না।
তবে এই কনকনে ঠান্ডায় কয়েকদিনে এই উপজেলায় শীতবস্ত্র বিতরণ করতে দেখা যায়নি, উপজেলা প্রশাসন, সহ কোন প্রকারের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে।