রাহেবুল ইসলাম টিটুল লালমনিরহাট।।
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে অবাদে আসছে ভারতীয় গরু, মাদক ফেন্সিডিল, টাকা যাচ্ছে হুন্ডির মাধ্যমে।
এক সপ্তাহ আগে সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া টপকিয়ে গরু পারাপার করতে গিয়ে দূর্ঘটনায় আহত আবুল হোসেন(৪০)গতকাল রংপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা গেছে। সে কালীগঞ্জ থানার সীমান্তবর্তী চন্দ্রপুর মাস্টারপাড়া গ্রামের মৃত মেহেরগেনের ছেলে।
খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য লালমনিরহাট সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে।
স্থানীয় এলাকাবাসি ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নিহত আবুল হোসেন গত এক সপ্তাহ আগে তার দলবল নিয়ে জাওরানী-বুড়িরহাট সীমান্ত (সীমান্ত পীলার নং-৯১৩-এস-৩ সংলগ্ন) এলাকা দিয়ে কাঁটাতারের বেড়া টপকিয়ে ভারতীয় গরু পারাপারের সময় ‘কুটা’ পড়ে গিয়ে মাথায় গুরুতর আঘাত পায়।
সঙ্গীরা তাকে উদ্ধার করে গোপনে কোনো হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়। পরে, উন্নত চিকিৎসার জন্য স্বজনরা তাকে রংপুর ডক্টরস কমিউনিটি হাসপাতালে ভর্তি করে । সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর দুপুরের দিকে আবুল হোসেন মারা যায়। পরে, স্বজনরা লাশ বাড়ি নিয়ে যাওয়ার পথে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ লাশ আটক করে থানায় নিয়ে আসে। গতকাল ১৭নভেম্বর লাশ লালমনিরহাট সদর হাসপাতাল মর্গে ময়না তদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে হস্তন্তর করেন।
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) ইমতিয়াজ কবির ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি আরো জানান, ঘটনার তদন্ত করে অপরাধ চক্রের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে,লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার সীমান্ত-জাওরানী-বুড়িরহাট বিওপি এলাকা দিয়ে অবাদে পাঁচার হয়ে আসছে ভারতীয় দামড়াজাতের গরু। আসছে মাদক- মদ,গাঁজা,ইয়াবা,ফেন্সিডিল। প্রতিদিন শত শত গরু আসছে প্রকাশ্যে। সংঘবদ্ধ চক্র এসব গরু রাতের বেলায় বিশেষ কায়দায় বাঁশের তৈরি ‘কুটা’ দিয়ে কাঁটাতারের বেড়ার উপর দিয়ে টপকায়ে পার করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরে নিয়ে আসে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রে জানা যায়, গরু পারাপারে নিয়োজিত কয়েকশ’ চোরাকারবারি ৪০/৫০জন করে ভাগ হয়ে৩/৪টি সিন্ডিকেট চক্র দ্রæত সময়ের মধ্যে কয়েকশ’ গরু পার করে নিয়ে আসে। এসব গরু ‘ডাংগুয়াল’ বাহিনী দিয়ে সীমান্তের বিভিন্ন হাট বাজারের আসেপাশে গড়ে উঠা গোডাউন(গরু জমা রাখার আস্তানা)-এ নিয়ে জমা রাখে। গরু গোডাউনে পৌঁছার আগেই এসব গরু নামে-বেনামে হাটের ইজারাদার কর্তৃক রশিদ হয়ে যায়।
সুত্রটি আরো জানায়, কাঁটাতারের বেড়া অতিক্রম থেকে গোডাউন পর্যন্ত গরু প্রতি ডাংগোয়ালকে দিতে হয় ৩ হাজার টাকা ।
স্থানীয় গ্রাম পুলিশ ও নেতা,কর্মীদের গরু প্রতি ৫শ’ টাকা দিতে হয়। কথিত সংবাদিকদের মাসোহারা দিতে হয়। এক কথায়, চোরা কারবারিরা ‘টপ টু বটম’ ম্যানেজ করেই ভারতীয় গরু নিয়ে আসছে।
চোরাপথে আসা গরু সীমান্তবর্তী হাট ইজারাদারদের রশিদের মাধ্যমে হয়ে যাচ্ছে বৈধ। এসব গরু ট্রাকে-পিকাপে নির্বিগ্নে চলে যাচ্ছে দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন অঞ্চলে । এ ব্যপারে প্রশাসন,পুলিশ,বিজিবি,স্থানীয় নেতা,কর্মীরা বলছে ভিন্ন কথা।
তারা এসব কিছুই জানেন না। পুলিশের দাবী, সীমান্তে পুলিশের প্রবেশে বিধি নিষেধ রয়েছে। বিজিবি’র অনুমতি নিতে হয়। বিজিবি বলছে, জনবল কম থাকায় তারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেনা। টহল দল ক্যাম্প থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে চোরা কারবারিরা জেনে যায়। যে কারনে তারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেনা। মাঝে মাঝে বিজিবি এবং চোরা কারবারিদের মধ্যে গরু ধরতে গিয়ে সংঘর্ষ-গুলি-হতাহতের ঘটনা ঘটে। গত ১৪দিন আগে বুড়িরহাট সীমান্তের খন্ডারচড়া এলাকায় গরু আটক করতে গিয়ে বিজিবি- চোরাকারবারিদের সাথে সংঘর্ষ বেধে যায়। এতে এক বিজিবি সদস্য এবং চোরাকারবারিদের কয়েকজন আহত হয়। নির্বাচন মুখি দেশের অস্থির পরিস্থিতির সুযোগে চোরাকারবারিরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এদিকে, কোটি কোটি টাকার ভারতীয় গরু, ফেন্সিডিল আসছে অবাদে। আর, টাকা যাচ্ছে হুন্ডির মাধ্যমে। ফলে, ক্ষতিগ্রস্থের হুমকিতে পরছে দেশীয় গরুর খামারিরা।