লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নে বিএডিসির বোরো ধানের বীজে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অনেক কৃষক।
তাদের অভিযোগ, উপজেলা বিএডিসির অফিস থেকে সরবরাহ করা ব্রি-৭৪ (জিং) ধানের বীজে গাছ হয়েছে একাধিক জাতের। বলে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার, কৃষি অফিসার, উপজেলা চেয়ারম্যান বরাবর লেখিত অভিযোগ দেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে বিভিন্ন ধানের মিশ্রণ থাকায় কোনটার শীষে ধান ধরেছে, আবার কোনটায় এখনও ধানই আসেনি। একই জমিতে ফসলের এমন তারতম্য থাকায় তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন।
তাতে চাষাবাদের খরচ ও ফসল উৎপাদনে ব্যাপক লোকসানে পড়েছেন তারা।
এমন পরিস্থিতিতে এক জাতের বীজে একাধিক জাত তৈরির কারণ উদ্ঘাটন ও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।
তবে বিএডিসির কালীগঞ্জ উপজেলা শাখার অফিসে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে, দেখা যায় তাদের অফিসে তালা ঝুলানো সব সময়। যার ফলে তাদের সাথে কোনো ভাবে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,
তুষভান্ডার ইউনিয়নের কাশীরাম ও উত্তর ঘণেশ্যাম গ্রামে মানুষ জন বিএডিসির কালীগঞ্জ শাখা অফিস থেকে ধানের বীজ কিনেন।
চলতি মৌসুমে এই ইউনিয়নের প্রায় ১০ জন কৃষক ব্রি-৭৪ (জিং) জাতের ধানের বীজ কিনে চাষাবাদ শুরু করেন। তারা ক্ষেতে সঠিক মাত্রায় সেচ, সার দেন। অন্য সবার মতো তাদের ক্ষেতও দেখতে বেশ সুন্দর হয়। কিন্তু চারা বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষেতের ফসলে তারতম্য দেখা দেয়। ক্ষেতের কিছু অংশে যখন ধানের থোড় আসছে, অন্য অংশে আসছে না। আবার কোনো জমিতে ধানের শীষ পরিপুক্ত হয়ে গেলেও অন্য পাশে এখনও থোড়ই বের হয়নি।
জমিতে ফসলের এ রকম তারতম্য দেখে তারা ফলন নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন। প্রতিবিঘায় ধান চাষে তাদের ১০-১৫ হাজার খরচ হয়েছে।
এসব জমিতে স্বাভাবিক ধান হলে বিঘায় ২০-২২ মণ উৎপাদন হয়। এখন ফসলের এ রকম তারতম্যের কারণে এসব বিঘায় ১০ থেকে ১৫ মণ ধান উৎপাদন হবে। যাতে তাদের বিঘা প্রতি ১০-১৫ হাজার টাকা ক্ষতি হবে। শেষ সময়ে এসে ক্ষেতে ফসলের এ অবস্থায় সবাই ভেঙে পড়েছেন। ফসল ঘরে তুলতে না পারলে সার-সেচের ঋণ পরিশোধ করবেন কীভাবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন এসব ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক।
তুষভান্ডার ইউনিয়নে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কামিরাম গ্রামের কৃষকরা। ওই গ্রামের সহিদুল ইসলাম নামে এক বৃদ্ধ কৃষক জানান, ফলন বেশি হওয়ার আশায় মাঠের পর মাঠ ব্রি-৭৪ ধান চাষ করেছি আমরা। অথচ জমিতে ভেজাল ধানের গাছ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এতোদিন কিছু বোঝা যায়নি। যখন ধানের থোড় বের হয়েছে, তখনই বুঝতে পেরেছি। বিএডিসি আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। এখন আমাদের পথে বসা ছাড়া কিছু করার নেই।
আজিজার নামে এক কৃষক জানান,
বিএডিসির অফিসের পরামর্শে ৪ বিঘা ধান লাগিয়েছি। এখন সব ধানেই ভেজাল। এই ভেজাল ধান বিক্রি করতে পারব না। এতো টাকা খরচ করে, রোদে পুড়ে এই ধান চাষ করে শেষ সময়ে ক্ষেতের ফসলের এ অবস্থায় হতাশ হয়ে পড়েছি।
আলমগীর হোসেন নামে আরেক ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক বলেন, ব্রি-৭৪ জাতের ধানের বীজ কিনেছিলাম। এখন জমিতে সেই ধানের চারা লাগিয়ে দেখছি ব্রি-ধান ৭৪ ছাড়াও হাইব্রিড জাতের শীষ বের হচ্ছে। আবার ক্ষেতের কোনো অংশে ধানের শীষই বের হয়নি। একই গ্রামের ১০ জন কৃষকের ৩০ দোন জমিতে এই সমস্যা।
বিএডিসির বীজ নিয়েও আমাদের এভাবে ঠকতে হচ্ছে। যারা ভেজাল বীজ দিয়ে কৃষকদের সর্বনাশ করলো আর এই ক্ষতির তালিকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে কৃষকরা।
এ বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার
মাহমুদা খাতুন, খাতুন বলেন কয়েক জন কৃষক, আমাদের কাছে লেখিত অভিযোগ করে গেছে
বিএডিসির বীজের ব্যাপারে, এখানে আমার কোন হাত নেই, তবে এখানে কে দায়িত্বে আছে সে টা ও জানি না আজ পযন্ত, তবে কৃষক রা আমাকে জানিয়ে তারা বীজ বিএডিসি অফিস থেকে নিয়েছে, যদি বীজে ভেজাল থাকে তা হলে বিএডিসির জেলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন।
এবিষয়ে কালীগঞ্জে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অতিরিক্ত দায়িত্ব থাকা কর্মকর্তা ইসরাত জাহান ছনি জানান অভিযোগ পেয়েছি বিষয়টি তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ।
এ বিষয়ে লালমনিরহাট বিএডিসির সিনিয়ার সহকারী -পরিচালক মোছাঃআক্তারুন নাহার রুবি সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে
তিনি বলেন তারা আমাদের কাজ থেকে এই বীজ নিয়ে কি না তার আছে কি না সব কিছু দেখে তার পর রংপুর অফিসের সাথে কথা বলে কী কারণে এমনটা হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হবে,
ব্রি-৭৪ জাতের বীজ ভেজাল নয় দাবী করে তিনি বলেন, অনেক সময় কৃষক রা বাহিরের বীজ নিয়ে অফিসের কথা বলে।