রাহেবুল ইসলাম টিটুল লালমনিরহাট।
নববর্ষ ঘিরে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে
ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা। এমনিতে বছরের অনেকটা সময় কাজের চাপ থাকে না। তবে আসন্ন বৈশাখি মেলা কে কেন্দ্র করে এখন দম ফেলার ফুসরত নেই তাদের। সারা বছর এই সময়টার জন্য অপেক্ষায় থাকেন তারা।
নববর্ষ কেন্দ্র করে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বসে বর্ষবরণ মেলা। মেলার চাহিদা অনুযায়ি মৃৎশিল্পীরা মাটি দিয়ে তৈরি করেছেন রকমারি পুতুল, ফুলদানি, ফল, হাতি, ঘোড়া, কলস, ঘটি। এ ছাড়া হাঁড়ি, কড়াই, মাটির ব্যাংক, বাসন, থালা, বাটি, চুলা ও ফুলের টবসহ বিভিন্ন জিনিস তৈরি করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
এদিকে বাপ-দাদার পেশা টিকিয়ে রাখতে এখনও এ পেশার সঙ্গে জড়িত অনেকে। তবে বেচাকেনা কম থাকায় অনেকেই এ কাজ করতে অনাগ্রহ প্রকাশ করছে। মানুষ এখন মাটির তৈরি জিনিসের চেয়ে মেলামাইন, প্লাস্টিককে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে বলে তাদের পেশায় ভাটা পড়েছে।
জানা গেছে, উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের
কাকিনার কুমার পাড়া সহ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে মৃৎশিল্প ছিল।
তাদের মাটির জিনিস ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যেত। নানা প্রতিকূলতা ও অভাব অনটনের কারণে কাকিনা গ্রামের পালবাড়ির মৃৎশিল্পীরা বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন কারন নেই তাদের কোন আধুনিক মেশিন ও সরজ্ঞাম।
এখানকার মৃৎশিল্পীরা জানান, তাদের সন্তানরা মাটির কাজ শিখতে চায় না। তারা অন্য পেশায় নিযুক্ত হচ্ছে। তাদের খোঁজখবর কেউ নেয় না। পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রশিক্ষণ পাওয়া গেলে খেলনা, শো-পিচসহ সৌখিন জিনিস তৈরি করে শিল্পকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব বলে মনে করেন মৃৎশিল্পীরা।
কাকিনা কুমার পাড়ার বুদারু পাল এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভাব অনটনের মধ্যে ও হাতেগোনা কয়েকটি পরিবার বাপ-দাদার পেশা বুকে আঁকরে ধরে আছে। ‘আমাদের পেশায় এখন আর আগের মতো ব্যস্ততা নেই। শুধুমাত্র বৈশাখ আসলেই আমাদের হাতে কিছুটা কাজ থাকে।’
কোনা পাঁল নামে এক কুমাড় জানায়, আমাদের স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করে দিলে এই মৃৎ শিল্পকে ধরে রাখতে পারবো এবং ট্রেনিং এর ব্যাবস্থা হলে আমাদের এই পেশা টিকিয়ে রাখা সম্ভব। তারা ট্রেনিং এর মাধ্যমে মৃৎ শিল্পের সাথে জরিত পরিবার গুলো সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে নতুন ডিজাইনের পন্যসামগ্রী উৎপাদন করতে পারবে বলে জানান তিনি আরো বলেন, ‘যদি জাত পেশা না হতো, তাহলে অন্য কাজ করতাম। আমাদের এখানে প্রায় ৩০টি পরিবার এই কাজ করত, কিন্তু এখন ১০-১২টি পরিবার এ পেশার সঙ্গে জড়িত রয়েছে। বাকিরা অন্য কাজ করছে।’