বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামুল্যে নতুন বই পৌছে দিতে বছরের প্রথম দিনটিকে বই উৎসব ঘোষনা করেছে সরকার। অগ্রীম বেতন ও সেশন ছাড়া সেই বই না দেয়ার অভিযোগ উঠেছে শিক্ষার্থীদের। লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার ভেলাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে সেশন ফি ও অগ্রীম ৭ মাসের বেতন ছাড়া নতুন বই না দেয়ার অভিযোগ তুলেছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা জানান, প্রথম থেকে ৯ম শ্রেনী পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীকে সরকারী ভাবে বই বিনা মুল্যে বিতরন করা হলেও ভেলাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে বই আটকিয়ে অগ্রীম বেতন ও সেশন ফি আদায় করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে যারা অগ্রীম বেতন ও সেশন ফি পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছেন তাদের হাতে পৌছেনি নতুন বই। তারা বঞ্চিত হচ্ছেন নতুন বই পাওয়ার আনন্দন থেকে। সন্তানদের কান্না থামাতে ধার দেনা করে সেই অগ্রীম বেতন ও সেশন ফি’র আংশিক পরিশোধ করেও বেশ কিছু শিক্ষার্থীর হাতে পৌছেনি নতুন বই।
ভেলাবাড়ি বাজারে চা বিক্রেতা নাজমা খাতুন জানান, প্রায় এক যুগ আগে স্বামীকে হারিয়েছেন। একমাত্র সন্তান নাজমুলকে শিক্ষিত করতে চা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন তিনি। তার সন্তান ভেলাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে এবার ৭ম শ্রেনীতে উঠেছে। নতুন বই নিতে অনেক আশায় বিদ্যালয়ে গিয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরে কান্না করে সে। সেশন ফি’র ৩ শত টাকা পরিশোধ না করায় বই পায়নি নাজমুল। তাই ধার দেনা করে একশত টাকা নিয়ে পুনরায় বিদ্যালয়ে গিয়েও নতুন বই পায়নি নাজমুল। বই না পেয়ে কান্না করছে তার সন্তান।
নাজমুল ইসলাম জানায়, প্রথম বার খালি হাতে ফিরে মায়ের কাছে বায়না ধরে একশত টাকা নিয়ে গেলেও তাকে বই দেয়া হয়নি। একটা টোকেন দেয়া হয়েছে। বই পরে দেয়া হবে বলে বিদ্যালয় থেকে জানানো হয়েছে। নাজমুল আরো জানায়, শুধু সে একা নয়, তার ক্লাশের ২০/৩০ জন বন্ধু টাকার অভাবে বই পায়নি।
একই বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেনীর ছাত্র শামিম মিয়া জানায়, পুরাতন বই জমা দিয়ে টোকেন নিতে হয়। এরপর সেশন ফি ৩’শত ও অগ্রীম ৭ মাসের বেতন মিলে ৭৫০ টাকা পরিশোধের রশিদ জমা দিয়ে নতুন বই নিতে হয় তাদের বিদ্যালয়ে। পুরাতন বই জমা না দিলে বা টাকা না দিলে নতুন বই মিলে না। ৭৫০ টাকা দিতে ব্যর্থ হয়ে সে বই ছাড়াই খালি হাতে বাড়ি ফিরে এসেছে। রিক্সা চালক বাবাকে অনেক বার বলেও টাকা জোগার করতে ব্যর্থ হওয়ায় তার মাঝে নেই বই উৎসবের আনন্দ। শামিম বলে, কয়েকটা দিন পরেই টাকা দিতে চেয়েছি, তবুও বই দেয়নি। বন্ধুরা নতুন বই নিয়ে আনন্দে বাড়ি ফিরলেও তাকে ফিরতে হয়েছে খালি হাতে।
শামিমের সহপাঠি সবুজ মিয়া জানায়, টাকা না দেয়ায় সেও নতুন বই পায়নি। পুরাতন বই জমা দিয়েছে, নেই শুধু টাকা জমা দেয়ার টোকেন। তাই নেই নতুন বই। সে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের আশুহস্তক্ষেপ কামনা করেছে।
ভেলাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনিচুর রহমান জানান, বাধ্যতামুলক নয়, অনেকেই স্বেচ্ছায় পুরাতন বই জমা দিয়েছে। টাকার জন্য নয়, যারা ফেল করেছে বা বিদ্যালয়ে আসেনি তাদের বই দেয়া হয়নি। যারা উপস্থিত ছিল তাদের প্রত্যেকে নতুন বই দেয়া হয়েছে।
আদিতমারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এএসএম আরিফ মাহফুজ জানান, বই আটকিয়ে শুধু নয়, বই উৎসবের দিয়ে অন্য কোন পাওনাদিও আদায় করা নিষেধ রয়েছে। টাকার জন্য বই না দেয়ার বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান জানান, বিষয়টি তার জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।