রাহেবুল ইসলাম টিটুল লালমনিরহাট।।
মুক্তিযুদ্ধে স্বামীকে হারিয়ে সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিতে র্দীঘদিন ধরে মানুষের বাড়ি বাড়ি ঝিয়ের কাজ করছেন বৃদ্ধা রহিমা বেগম (৭০)। সেই রহিমার খবর এখন রাখেন না তার সন্তানরা। তিস্তা নদীর বাঁধের ওপর টিনের ঝুপড়ি ঘরে তার বসবাস। ওই ঘরের ভেতরে ঢুকে উপরে তাকালে টিনের ছিদ্র দিয়ে সূর্যের আলো দেখা যায়। জরাজীর্ণ টিনের ঝুপড়ি আর ভাঙা বিছানায় কাটছে তার জীবন চক্র।
রহিমা বেগমের বাড়ি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নের কশিরাম গ্রামের মুন্সির বাজার এলাকায় তিস্তা নদীর বাঁধের ওপর। ওই এলাকার মৃত মতিয়ার রহমানের স্ত্রী রহিমা বেগম।
কালীগঞ্জ উপজেলায় এ পর্যন্ত ৬২৫টি পরিবার মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার জমিসহ ঘর পেলেও রহিমার ভাগ্যে তা জোটেনি। উপজেলায় ভূমিহীনদের জন্য জমিসহ ঘর বরাদ্দে সুবিধাভোগীদের তালিকা তৈরিতে অনিয়মের অভিযোগও উঠেছে।
স্থানীয়রা জানান, বৃদ্ধা রহিমা বেগমের তিন ছেলে ও এক মেয়ে। এক ছেলে ঢাকায় থাকেন, এক ছেলে এলাকায় চায়ের দোকানে কাজ করেন আর এক ছেলে নিজেই অসুস্থ। অসুস্থ ছেলের স্ত্রী চলে গেলেও রেখে গেছে একটি শিশু মেয়ে। কোনো ছেলেই তাদের বৃদ্ধা মায়ের খবর নেয় না। ফলে রহিমার এ বয়সে কখনো কখনো মানুষের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে, কখনো আবার কারো কাছে সাহায্য নিয়ে চলে জীবন। শিশু নাতনিকে নিয়ে ভাঙা ঘরে কাটছে রাত। তবুও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির চোখ পড়েনি বৃদ্ধা রহিমার ওপর।
রহিমা বেগম বলেন, ‘মোর ছাওয়াপোয়া থাকিও নাই। একটা বেটা তো বাঁচে না। মুই নিজে মরা, তাতে আর একটা বেটার ছাওয়াক নিয়ে বড় মরা হছুং। সবায় ঘর পায় মোরে কপালোত ঘর নাই বাহে । টাকা দিয়ার পাইলে মুইও পাকা ঘরত থাকির পানু হয়। কত কষ্ট করি রাইতত থাকোং ছোট ছাওয়াটা নিয়া, রাইত আসি দেখি যান বাহে।’
ওই এলাকার বাসিন্দা বেলাল হোসেন জানান, ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি তিনি মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করে কোনরকম চলে। যে যা দেয় তা দিয়েই তার জীবন চলে। তাকে যদি একটি সরকারি ঘরের ব্যবস্থা করে দেয়া যায় তাহলে ভালো হত।
তুষভান্ডার ইউপি চেয়ারম্যান নুর ইসলাম আহমেদ জানান, রহিমা বেগম অসহায়। ওই বৃদ্ধা সরকারি ঘর পাওয়ার যোগ্য বলেই মনে করি।
কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফেরদৌস আহমেদ বলেন, রহিমা বেগমের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, পর্যায়ক্রমে সকল ভূমিহীনদের তালিকা করে পুনর্বাসন করা হচ্ছে।