রাহেবুল ইসলাম টিটুল লালমনিরহাট প্রতিনিধি: “আমার গায়ে যত দুঃখ সয় বন্ধুয়ারা কর তোমার মনে যাহা লয়, পাষাণ বন্ধুরে বলেছিলে আমার হবে মন দিয়াছি এই ভেবে। গানটি ভেসে আসছিল এক সুকণ্ঠ করুণ সুরে সুরটি যেন হৃদয় ছুয়ে গেল।
কালীগঞ্জ উপজেলার কালভৈরব বাজার লেকের ধারে। সেখানে গিয়ে দেখি ৫০ বছরের এক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে ঘিরে রেখেছে বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা কিছু দর্শনার্থী। সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে নিরবে চেয়ে আছে লোকটির দিকে।
খোঁচা খোঁচা দাড়ি, একটি ফতুয়া গায়ে, উপরোক্ত গানটি গেয়ে চলেছে। আগত শ্রোতাদের সাথে দাড়িয়ে তার গানটি শুনতে লাগলাম। নিস্তব্দ পরিবেশ। একের পর এক গান গেয়ে চলেছেন তিনি। একই সাথে শ্রোতার সংখ্যাও বাড়ছে। একটি গান শেষ হবার সাথে সাথে শ্রোতারা কেও কেও কিছু টাকা দিচ্ছেন।একে একে গোটা ৮/৯ টি গান শেষ করলেন আঃ মান্নান।
প্রায় ঘন্টা খানেক পর গান গাওয়া শেষ হলে কথা হয় মান্নানের সঙ্গে। কথা বলে জানা যায় উনার জন্মস্থান ঢাকা তেজগাঁও থাউপজেলার নাখালপাড়া গ্রামে। তার বয়স যখন ৭বছর তখন থেকেই শখের বশে গান করতেন ।
বর্তমান তিনি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার চাপারহাট চন্দ্রপুর ইউনিয়নর বোতলা শীলেরঘাট এলাকার বাসিন্দা। লালন,বাউল,মুর্শিদি এসবের প্রতি ছিল খুব আগ্রহ। গানের গলা ভালো থাকায় বন্ধুদের উৎসাহ আর শখের কারনে প্রায় সময় গান করতেন।আর্থিক সংকটে বেশীদূর লেখাপড়া করতে পারেননি।
একসময় পরিবারের আর্থিক সংকটের সময় হালধরতে কাজে নেমে পড়েনে। তিনি ইতি মধ্যে বিয়ে করে সংসার বেধেছেন। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মান্নান সহায় সম্বল সবকিছু হারিয়ে কোন উপায় না পেয়ে পেটের দায়ে ২৬ বছর ধরে হাটে বাজারে গান গেয়ে বেড়ান।
তার সংসারে ১ মেয়ে ১ ছেলে বউ মিলে ওদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৫ জন। মেয়েটি চাপারহাট কলেজের ডিগ্রী ২য় বর্ষের ছাত্রী। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সংসার চালাতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে আঃ মান্নান ।
প্রতিদিনের দুই মুঠো খাবারের সন্ধানে বেছে নেয় এই গান গাওয়াকে। পথে পথে কিংবা চায়ের দোকানে গান গেয়ে দর্শকদের খুশি করে যে অর্থ পায় তাই দিয়ে চলে তার পুরো সংসার। তার গানে মুগ্ধ হয়ে এখন অনেকে তাকে বিভিন্ন জায়গায় গান গাওয়ার দাওয়াত দিয়ে থাকেন। বর্তমানে তার এই দৈন্য দশায় গানই এখন বেচেঁ থাকার একমাত্র সম্বল।
যেখানে দুবেলা খাবার জোটাতে কষ্ট হয় সেখানে তার মেয়ের লেখাপড়া চালানো এখন দূরহ। মেয়ের লেখাপড়া এখন বন্ধ হবার উপক্রম। সমাজের সচ্ছল ও বিত্তবানরা যদি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় তবে মেয়েটির লেখাপড়া চালানো সম্ভব হবে।