হাকিমপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ
দিনাজপুরের হিলিতে কাজ নেই, তাই শহরে ছুটছে খেটে খাওয়া মানুষ, কিন্তু শহরেও কাজ সীমিত। ফলে অনেক চেষ্টা করেও কাজের সন্ধান মিলছে না,খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে অধিকাংশ দিনমজুর ও বেকার যুবকদের। বাড়ি ফিরে পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকতে হচ্ছে অর্ধাহারে-অনাহারে।
হাকিমপুরের কয়েকজন শ্রমজীবি মানুষের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
তারা জানান, প্রতিদিন হিলি থেকে কাজের সন্ধানে ঢাকা শহরে যায়। কেউ যায় শ্রম বিক্রি করতে, আবার কেউ যায় চাকুরি আশায়। কিন্তু শহরে কাজের তুলনায় শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় সবাই পারে না তাদের শ্রম বিক্রি করতে। কিন্তু সবার ভাগ্যে কাজ জুটছেনা। ঢাকা থেকে ফিরে আসা এক যুবক বলেন হিলিতে যদি শিল্প কলকারখানা গড়ে উঠতো আমরা সহজে শ্রম দিতে পারতাম।
চুড়িপট্টি গ্রামের হিরু মিয়ার ছেলে মিজান গাজীপুর টেক্সটাইলস ফ্যাক্টরি সহকারী হিসেবে কাজ করছেন দীর্ঘদিন। মাসে ৭ হাজার টাকা উপার্জন করেছেন। কিন্তু প্রায় ১৬ ঘন্টা কাজ করে স্বল্প বেতনে ঘর ভাড়া নিজে খরচ করে কিছু থাকে না। তাই ফিরে এসেছেন বাড়িতে। চার দিন ধরে বিভিন্ন জায়গায় ধর্ণা দিয়েও কোনো কাজ পাননি। কাজ না থাকায় পড়েছেন বিপাকে, ঘরে চাল নেই। একমাত্র মেয়ে নুরী খাতুন সপ্তম শ্রেণিতে উঠেছে। তার ভর্তি ও স্কুলড্রেস বানানোর জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে স্কুল থেকে। সংসারে অভাব-অনটনের কারণে অনেক আগেই ছেলেকে অন্যের দোকানে কাজে লাগিয়েছেন। স্ত্রী অন্যের বাসায় কাজ শেষে যে খাবার নিয়ে আসেন, তা ভাগ করে খাচ্ছেন কয়েক দিন ধরে। তিনি বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। কাজ করে খেতে চাই, আমাদের কাজ দেন।’
শ্রম বিক্রি করতে আসা হাকিমপুর উপজেলার জালালপুর গ্রামের ময়েন উদ্দিন, মজিবুর রহমান, হেফাজ উদ্দিন জানান, প্রতিদিন সকাল থেকে হিলি বন্দরে তিন থেকে সাড়ে তিনশ মানুষ আসে কাজের সন্ধানে। কিন্তু কাজ কমে যাওয়ায় অধিকাংশ মানুষকেই ফিরতে হয় খালি হাতে। তারা বলেন, ‘গ্রামে আমন ধান কাটার পর আলু রোপণের কাজও শেষ। এখন মাঠে তেমন কাজ নেই। আরও মাস খানেক পর শুরু হবে ইরি ধান রোপণের কাজ। তখন এত কষ্ট থাকবে না। কিন্তু এই এক মাস পার করাই কঠিন হয়ে পড়েছে।
দক্ষিন বাসুদেবপুর (ক্যাম্প পট্রির) এলাকার প্রতিবন্ধী আলাউদ্দিন মিয়া জানান, তিনিও রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। বর্তমানে আগের মতো যাত্রী না থাকায় তেমন রোজগার হয়না। তারপর মরার উপর খঁড়ার ঘা। সম্প্রতি এক দূর্ঘটনায় একটি পা হারিয়ে বর্তমানে পঙ্গু। সরকারি কোন প্রতিবন্ধী ভাতা বা সুযোগ সুবিধা না পাওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
হাকিমপুর উপজেলার ১ নং খট্রামাধবপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোকলেছার রহমান জানান, এ সময়টাতে গ্রামাঞ্চলে কাজ একটু কম থাকে। সরকার কর্মসুজনসহ বিভিন্ন কর্মসুচির মাধ্যমে বেকারদের কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন।