লালমনিরহাট জেলায় প্রথমবারের মত একটি হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট এর জন্য হোটেল বয় হিসাবে কাজ করবে এ রোবট। রোবটটির নির্মাতা ও কারিগর আহসান হাবিব (১৮)। সে কালীগঞ্জ সরকারী করিম উদ্দিন পাবলিক কলেজের দ্বাদশ শ্রেনীর শিক্ষার্থী। বাড়ি লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নের সুন্দ্রাহবি গ্রামে। মৃত মজু মিয়ার ছেলে,। তিন ভাই- বোনের মধে আহসান হাবিব সবার ছোট। ইউটিউব এর ভিডিও দেখে ১ মাসের প্রচেষ্টায় সে এ রোবট টি বানাতে সক্ষম হয়েছে।
মানুষের দেহের গঠনের সঙ্গে মিল সাবলীল ভাষায় কথার উত্তর দেয়া, হালকা ভারী কাজ করতে সক্ষম, লোককে মনে রাখা, মানুষের ছবি ও কথা রেকড রাখতে পারা, হ্যান্ডশেক ও অঙ্গভঙ্গিও করতে পারা এ রোবটি বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে প্রযুক্তিখাতে বাংলাদেশের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করতেই রোবট টিকে তৈরি করা হয়েছে বলে জানালেন এর তরুণ নির্মাতা আহসান হাবিব।
জানা গেছে, সুন্দ্রাহবি গ্রামের দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া আহসান হাবিব নতুন কিছু আবিস্কারের স্বপ্ন দেখতো বাল্যকাল থেকেই। কিন্তু বাবা দরিদ্র কৃষক থাকায় তার প্রতিভাকে সঠিকভাবে প্রস্ফুটিত করতে পারছিলো না সে। ভাগ্য তার প্রতি সুপ্রসন্ন ছিল ২০১৭ সালে আহসান হাবিব তুষভান্ডার আর এমএমপি সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয় পড়ার সুবাদে সে স্কুলের ফান্ডের টাকায় বিজ্ঞান মেলা উপলক্ষে একটি রোবট বানানোর সুযোগ পেয়ে সে লালমনিরহাট জেলা পর্যায়ে প্রথম স্থান অধিকার করে।
এর কিছুদিন পর পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী দরিদ্র পিতাকে হারিয়ে তার জীবনে আধাঁর ঘনিয়ে আসতে শুরু করে। পিতাকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে আহসান হাবিব। থেমে যায় তার স্বপ্ন, লেখাপড়ার খরচ চালাতে হিমশিম খায় হাবিব। শুরু হয় তার কঠিন জীবন সংগ্রাম। তবুও দিশেহারা হয়ে পড়েনি এ স্বপ্নবাজ যুবক।
প্রতিদিন সকাল ৬ টা হতে রাত ১২ টা পযন্ত সে মোট ১২ টি টিউশনি করেই নিজের পরিবার ও লেখাপড়ার খরচ যুগিয়ে চলেছে। টিউশনির সামান্য সঞ্চায় ও ধার দেনা করেই এবার সে একটি হোটেলের জন্য এ রোবটটি বানিয়েছেন।
এ বিষয়ে রোবট নির্মাতা আহসান হাবীব জানান, আমি স্কুলের বিজ্ঞান মেলায় প্রথম আপডেট কিছু করার লক্ষ্যে রোবট বানাই। এবং সে মেলায় আমি জেলার চ্যাম্পিয়ন হই। মুলত ইউটিউব দেখেই এ কাজে আমি আগ্রহী হই।
সে আরো বলেন এ কাজে আমি আমার মা,বড়ভাই, চাচা সবার আন্তরিক সহযোগিতা সব সময় পেয়েছি। আমার এ কাজে আমাকে সবসময় সহযোগিতা করেছে আমার বন্ধু। ভবিষ্যৎতে হাবিব আরো নতুন কিছু বানাতে চায়, সে জন্য সে সবার সহযোগিতা কামনা করে দোয়া চেয়েছেন।
তার মা খালেদা খাতুন বলেন, আমার ছেলের এমন কাজে আমার খুব ভাল লাগছে। আমি আনন্দিত।
চাচা সাজু মিয়া বলেন, গ্রামের সবার কাছে হাবিবের মেধার প্রশংসার কথা শুনে আমরা সকলে খুব খুশি। দোয়া করি সে ভবিষ্যৎ এ আরো ভাল কিছু করবে।
প্রতিবেশি মজনু মিয়া বলেন, দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া হাবিবের এ কাজে গ্রামের সবাই আমরা ধন্য। সে আমাদের গ্রামের গর্ব। তার এ কাজে আমাদের গ্রামের সুনাম ও সম্মান বাড়বে বলে মনে করি। সেই সাথে হাবিবের এ কাজে সবার সহযোগিতা কামনা করছি।
রোবটটি তুষভান্ডার রওশন ফিলিং স্টেশন সংলগ্ন ভোজন বিলাস হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট এর জন্য তৈরী করা হয়েছে। যা এ সপ্তাহেই উক্ত হোটেলে রোবটটি ডেলিভারী করা হবে বলে জানান হাবিব।
আহসান হাবিবের তৈরীকৃত রোবট দেখতে আজ শুক্রবার তার বাড়িতে উৎসুক জনতার ভীর করছে।