টেবিল-চেয়ারে বসে নাগরিক সাংবাদিকতা নয়, তিনি ছিলেন তৃণমূলের খেটে খাওয়া মানুষের সংবাদকর্মী, ছিলেন আপামর জনসাধারণের সাংবাদিক। এখনও হাজারো সংবাদকর্মীর প্রেরণার বাতিঘর মোনাজাত উদ্দিন। খবরের অন্তরালে যেসব খবর লুকিয়ে থাকে, সেসবের তথ্যানুসন্ধান এবং রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে তিনি নতুন মাত্রা যোগ করেছিলেন সাংবাদিকতার ইতিহাসে। গ্রামের মেঠোপথে ঘুরে ঘুরে এই তথ্যানুসন্ধানী সংবাদকর্মী তার সাংবাদিকতার জীবনে নানা মাত্রিকতার রিপোর্ট করেছেন।
পাশাপাশি লিখেছেন জীবনের অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ নানা ঘটনা। ১৯৪৫ সালের ১৮ জানুয়ারি রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন বরেণ্য এ সাংবাদিক। ষাটের দশকে বগুড়া থেকে প্রকাশিত বুলেটিনের মাধ্যমে সাংবাদিকতায় হাতে-খড়ি ঘটে তার। কর্মময় জীবনে তিনি ঢাকার দৈনিক আওয়াজ, দৈনিক আজাদ, দৈনিক সংবাদ এবং সর্বশেষ দৈনিক জনকণ্ঠে কাজ করেছেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন দৈনিক রংপুর পত্রিকার। তার সংবাদক্ষেত্র ছিল বাংলার মেঠোপথ, পিছিয়ে পড়া জনপদ। গ্রাম থেকে গ্রামের পথে হেঁটে দীর্ঘ জীবনে সঞ্চয় করেছেন অনেক অভিজ্ঞতা। আর এসব অভিজ্ঞতার আলোকেই লিখেছিলেন ১১টি বই। সংবাদপত্রে অনন্য অবদান রাখা ও কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৯৭ সালে একুশে পদক (মরণোত্তর), ১৯৮৭ সালে ফিলিপস পুরস্কার, ১৯৭৭ সালে রংপুর নাট্য সমিতির সংবর্ধনা, ১৯৮৪ সালে সাংবাদিক জহুর হোসেন চৌধুরী স্মৃতি পদক, ১৯৮৫ সালে আলোর সন্ধানে পত্রিকার সংবর্ধনা, ১৯৮৬ সালে ফটোগ্রাফিক সোসাইটি অব বগুড়ার সম্মাননা সার্টিফিকেট, ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অফ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স পুরস্কার, ১৯৮৮ সালে রংপুর পদাতিক গোষ্ঠীর গুণীজন সংবর্ধনা, ১৯৯০ সালে বগুড়া লেখক চক্র পুরস্কার, একই বছর লেখনির মাধ্যমে প্রযুক্তির অন্তর্নিহিত শক্তিকে প্রত্যক্ষ ও জনপ্রিয় করার দুরূহ প্রচেষ্টা চালানোর জন্য সমাজ ও প্রযুক্তি বিষয়ক পত্রিকা ‘কারিগর’ সম্মাননা এবং ১৯৯৫ সালে মর্যাদাশালী অশোকা ফেলোশিপ লাভ করেন।
এছাড়াও তিনি আরো অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন। ১৯৯৫ সালের ২৯ ডিসেম্বর আমাদের ছেড়ে চলে যান গ্রাম সাংবাদিকতার এ পথিকৃৎ। ওইদিন ব্রহ্মপুত্র নদের কালাসোনা চরের কাছে ফেরি থেকে পড়ে মারা যান তিনি। সে সময়ে তিনি দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকায় কাজ করতেন। চারণ সাংবাদিক মোনাজাতউদ্দিনের মৃত্যুর দুই যুগ পেরিয়ে গেছে। সাংবাদিক মোনাজাতউদ্দিনের মৃত্যুকে ঘিরে অনেক প্রশ্ন আছে। তিনি আসলে কি পা পিছলে নদীতে পড়ে মারা গিয়েছিলেন? নাকি কেউ তাকে ধাক্কা দিয়ে নদীতে ফেলে দেয়। দীর্ঘ দুই যুগে পেরিয়ে গেলেও এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি আজও।
এক সময়ের মোনাজাতউদ্দিনের একান্ত ঘনিষ্ঠ শিষ্য, সিনিয়র সাংবাদিক রংপুর এটিএন বাংলা ও এটিএন নিউজের মাহবুবুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা যারা মোনাজাতউদ্দিনের অনুরাগী ছিলাম। একটাই দুঃখ এখন পর্যন্ত তার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে পারিনি। এটা দেশের জন্য যেমন কষ্টের, তেমনি সাংবাদিক সমাজের জন্যও দুঃখের। কারণ সাংবাদিক মোনাজাতউদ্দিন সত্যিকার অর্থে একজন সব্যসাচি ছিলেন।
লেখালেখির পাশাপাশি তিনি একজন ভলো চিত্রশিল্পীও ছিলেন। প্রচ্ছদ অঙ্কনসহ সব গুনই তার মধ্যে ছিল। এই গুনি মানুষের মৃত্যুর কারণটা জানা উচিত ছিল।’
তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো। সংবাদ টি শুধু মাত্র অনলাইন ভার্সনের জন্য প্রযোজ্য ....
Copyright © 2024 লালমনিরহাট অনলাইন নিউজ. All rights reserved.